মিথানল নয়, আমাদের নীরবতাই প্রাণঘাতী — ডাঃ আজিজ
আমি গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশে সম্প্রতি পূজা উৎসব চলাকালীন একটি মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যু মদ্যপানে বিষক্রিয়ার কারণে হয়েছে। এই ট্র্যাজেডিকে আরও মর্মান্তিক করে তুলেছে সমাজের প্রতিক্রিয়া—আমরা ন্যায়বিচার চাওয়ার পরিবর্তে এখন ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করছি। আমি স্পষ্ট করে বলছি: এই ছাত্রটি সাধারণ মদ খেয়ে মারা যায়নি। সে মারা গেছে মিথাইল অ্যালকোহল (মেথানল) গ্রহণ করার ফলে—এটি একটি অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক, যা মানুষের পান করার জন্য নয়। অ্যালকোহলের তিন ধরনের রূপ রয়েছে: ইথাইল অ্যালকোহল (ইথানল) – সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে পানযোগ্য। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল – চিকিৎসা ও পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। মিথাইল অ্যালকোহল (মেথানল) – শুধুমাত্র শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য (যেমন: অ্যান্টিফ্রিজ, ফুয়েল, স্পিরিট); এটি অত্যন্ত বিষাক্ত ও প্রাণঘাতী। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছর শত শত মানুষ—প্রায়ই দরিদ্র, তরুণ এবং অসচেতন—মিথানল পানে মৃত্যুবরণ করেন বা স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন, কারণ এই বিষাক্ত পদার্থকে বেআইনিভাবে পানযোগ্য অ্যালকোহল হিসেবে বিক্রি করা হয়। এই ঘটনা একক কোনো ঘটনা নয়। এটি বারবার ঘটছে। তবুও: বেশিরভাগ ঘটনাই নথিভুক্ত হয় না। পরিবারগুলো সামাজিক লজ্জা, ধর্মীয় ভয় বা আইনি জটিলতার কারণে সত্য প্রকাশ করতে ভয় পায়। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, যারা এই বিষ বিক্রি করে তাদের অনেকেই শাস্তি পায় না। আমরা ভুক্তভোগীদের দোষারোপ বন্ধ করতেই হবে। প্রকৃত অপরাধীরা কারা? যারা বেআইনিভাবে মিথানল বিক্রি করে যারা মানুষের অসচেতনতা ও দুর্বলতা কাজে লাগায় যারা লাভের জন্য সচেতনভাবে মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে আমি আবেদন জানাই: আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারের প্রতি: অবিলম্বে মিথানল পাচার ও বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। লাইসেন্সিং, পরীক্ষাকরণ এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুন। সমাজকর্মী, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী ও গণমাধ্যমের প্রতি: এই বিষয় নিয়ে ট্যাবু ভাঙুন। সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। মিথানলের ক্ষতিকর দিক নিয়ে মানুষকে শিক্ষিত করুন। অভিভাবক ও সম্প্রদায়ের প্রতি: আপনার সন্তান ও প্রিয়জনদের রক্ষা করুন। এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন—ভয় বা লজ্জা নয়, ভালোবাসা ও সচেতনতা দিয়ে। সচেতনতা হচ্ছে প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। চলুন আমরা জীবন বাঁচাতে একসাথে কাজ করি: জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষামূলক কর্মসূচি আইনি সংস্কার ও জবাবদিহিতা এমন মৃত্যুর ঘটনা গোপন না রেখে সাহসের সাথে প্রকাশ নীরবতা নয়, সহানুভূতি, সাহস ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে আমরা হাজারো নিরীহ প্রাণ রক্ষা করতে পারি। আর একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হারানোর আগে, আসুন আজই আমরা পদক্ষেপ নিই।লেখক পরিচিতিঃ Dr Aziz Faculty SUNY Nassau Community college Long Island, NY
