মতামত

কোভিড ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যর্থতা: একটি ব্যক্তিগত প্রতিফলন

– ডাঃ আজিজ

কোভিড-১৯ আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে মরণঘাতী মহামারিগুলোর একটি, যা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। টানা ৩–৪ বছর ধরে চিকিৎসক, গবেষক, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকার এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে আজ মহামারিটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। টিকাদান, জনস্বাস্থ্য নীতিমালা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবুও আমার মনে আজও একটি গভীর উদ্বেগ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি সত্ত্বেও এত মানুষের মৃত্যু কেন হলো?

আমার দৃষ্টিতে, কোভিডের প্রাথমিক পর্যায়ে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা—যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান, ক্লিনিকাল চর্চা এবং নেতৃত্ব—বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে। শুরুতে আমি একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলাম: রোগীদের প্রায়ই অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে বলা হচ্ছিল, যদিও এটি মূলত একটি ভাইরাল সংক্রমণ। এটি ঘটেছিল আতঙ্ক, ভুল তথ্য এবং কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়ার কারণে। মানুষ ভীত হয়ে পড়েছিল, এবং সেই ভয়ে অনেকে নিজেরাই ওষুধ খেতে শুরু করে, এমনকি প্রমাণহীন “চিকিৎসা কিট” ব্যবহার করত। আমি চেষ্টা করেছি আমার বন্ধু, পরিবার ও পরিচিতদের সচেতন করতে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলাম এবং সহকর্মী চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছিলাম যেন অপ্রয়োজনীয় ওষুধ না দেন।

আমি শুরু থেকেই বিশ্বাস করতাম, সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হওয়া উচিত: রোগীকে আলাদা রাখা সম্পূর্ণ বিশ্রাম উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ফলো-আপ এই সহজ, প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতিগুলো অনেক সময় অবহেলিত হয়েছে তখনকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে। বরং আমরা যা দেখেছিলাম তা হলো ব্যাপক আতঙ্ক—শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে নয়, বরং সরকার এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মধ্যেও। সময়মতো, বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত প্রায়ই নেওয়া হয়নি। অনেক সিদ্ধান্ত ছিল প্রতিক্রিয়াশীল, পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। দুঃখজনকভাবে, আমরা আরও একটি গভীর সমস্যা লক্ষ্য করেছি: কর্পোরেট ও রাজনৈতিক স্বার্থের হস্তক্ষেপ। কিছু প্রভাবশালী নেতা অপ্রাসঙ্গিক বা ভুল তথ্য দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। অনেক সময় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রচার করা হয়েছে, যেখানে লাভ ছিল চিকিৎসার চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার। এতে অতিরিক্ত ওষুধের ব্যবহার বেড়েছে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা আরও কমে গেছে।

তাই আজ আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই: এই মহামারিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ শুধু ভাইরাসের কারণে মারা যায়নি, বরং মারা গেছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, নেতৃত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে। ভবিষ্যতের জন্য আমি সকলের কাছে একটি অনুরোধ রাখতে চাই: আতঙ্কিত হবেন না মানসিকভাবে দৃঢ় থাকুন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না প্রমাণভিত্তিক, যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করুন যারা মহামারির সময় প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এই প্রতিফলন দোষারোপ নয়, বরং একটি সতর্ক বার্তা—যাতে আমরা ভবিষ্যতে আরও প্রস্তুত, মানবিক এবং দায়িত্বশীল হই—স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবেও, এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবেও।

লেখক পরিচিতিঃ Dr Aziz Faculty SUNY Nassau Community college Long Island, NY