নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া চীনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনা অনুচিত – বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক মহলের মত
ঢাকা, ২৮ আগস্ট ২০২৫:
বাংলাদেশ চীন থেকে চতুর্থ প্রজন্মের ১২টি জে-১০সি জঙ্গি বিমান কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মার্চে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। চীনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলেও, রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন – অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে এমন কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়া কতটা যৌক্তিক।
সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন করা অত্যন্ত জরুরি এবং ‘ভিশন-২০৩০’–এ এ পরিকল্পনার উল্লেখ আছে। জে-১০সি যুদ্ধবিমান আকাশ থেকে আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে হামলার সক্ষমতার পাশাপাশি নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, শত্রুর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল করা ইত্যাদি বহুমাত্রিক অভিযানে সক্ষম। পাকিস্তান ইতোমধ্যে এই বিমানের কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক দাবি করেছে।
তবে সাবেক কূটনীতিক, সামরিক বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত, যা শুধুমাত্র নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের হাতে থাকা উচিত। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সময় চীনের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনা হলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, “প্রযুক্তিগতভাবে এই যুদ্ধবিমান বেশ ভালো, তবে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি বিবেচনা করতে হবে।”
সাবেক বিমান বাহিনী কর্মকর্তা এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার হোমওয়ার্ক করে রাখতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারকেই নিতে হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, “এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত। নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে তা নেয়া ঠিক নয়।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন করা, যুদ্ধবিমান কেনার মতো কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়া নয়।”
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর মন্তব্য করেন, “যুদ্ধবিমান কেনা আমাদের প্রয়োজন। তবে ধীরে এগোতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বাকি বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রতিটি জে-১০সি যুদ্ধবিমানের দাম প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার। তবে অর্থনৈতিক অবস্থা, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেটের প্রশ্নে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।