জনমত উপেক্ষা করেই বিদেশিদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা!

বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখে থেকেও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনালের দায়িত্ব বিদেশি অপারেটরদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী) গত রবিবার জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই চুক্তি সই করে হস্তান্তরের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি জানান, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, লালদিয়ার চরের টার্মিনাল নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালস এবং বে টার্মিনালের দুটি অংশে যথাক্রমে ডিপি ওয়ার্ল্ড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনালকে নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে এনসিটি বর্তমানে নৌবাহিনী-অধীন চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালনা করছে, যা আশিক চৌধুরীর দাবি অনুযায়ী, হস্তান্তরের পর প্রথম মাসে কন্টেইনার ওঠা-নামার হার ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।
রাজনৈতিক আপত্তি ও প্রশ্ন
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের কণ্ঠ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর ভূ-রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের এই বিষয়ে চুক্তি করার কোনো ম্যান্ডেট নেই।” ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান অভিযোগ করেন, “জনমত উপেক্ষা করে সরকার এই চুক্তি এগিয়ে নিচ্ছে।”
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রশ্ন তোলেন, “ডে-টু-ডে কাজের সীমিত ক্ষমতার অন্তর্বর্তী সরকার সবাইকে অন্ধকারে রেখে কেন বিদেশিদের হাতে বন্দর দিচ্ছে? এই দায় নির্বাচিত সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “লাভজনক প্রতিষ্ঠানের শুল্ক বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে বাড়ানো হয়েছে, যা আমদানি পণ্যের দাম বাড়াবে।” নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম সতর্ক করেন, “বন্দর এলাকার নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটির নিরাপত্তা বিদেশিদের হাতে ব্যবস্থাপনা গেলে ঝুঁকিতে পড়বে।”
পটভূমি ও বিতর্ক
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরের আয় ছিল ৫,২২৭ কোটি টাকা, ব্যয় ২,৩১৪ কোটি, ফলে মুনাফা দাঁড়ায় ২,৯১৩ কোটি টাকা। মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম প্রকাশ্যে জানান যে, আন্তর্জাতিক মানের অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান দিয়ে বন্দর পরিচালনার পরিকল্পনা আছে। এরপর থেকেই রাজনৈতিক দল, বাম সংগঠন ও বন্দর রক্ষা কমিটি এর বিরোধিতা করে আসছে।
এদিকে বন্দর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যদিও আন্দোলনকারীরা এটিকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করছেন এবং পুনরায় আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।
