চলমান সংবাদ

জামায়াত ও এনসিপির প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব: মতপার্থক্য না রাজনৈতিক কৌশল?


স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা | ১৪ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে একত্রে নামলেও দাবি পূরণের পরপরই একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই হঠাৎ দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে— এটি কি আদতে মতবিরোধ, না কি একটি কৌশলগত অবস্থান?

দ্বন্দ্বের সূচনা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। তাঁর বিতর্কিত স্ট্যাটাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানপন্থা এবং রাজাকারদের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত-শিবিরের প্রতি কটাক্ষ করা হয়। পোস্টটি পরবর্তীতে সরিয়ে নেওয়া হলেও এর স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যার জেরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতারা।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “একজন উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজ আলমের বক্তব্য শপথের পরিপন্থী। তিনি যদি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চান, তাহলে উপদেষ্টা পদ থেকে সরে এসে রাজনীতি করা উচিত।”

ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম অভিযোগ করেন, “এই ধরনের স্ট্যাটাস ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্ক তৈরি করার জন্য দেওয়া হয়েছে। এটা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কৌশলকেই মনে করিয়ে দেয়।”

দ্বন্দ্বের সূত্রপাত অবশ্য আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই স্পষ্ট হয়। এনসিপির নেতৃত্বে শাহবাগে আয়োজিত কর্মসূচিতে গোলাম আযমের নামে স্লোগান, জাতীয় সংগীতে বাধা, ও বিতর্কিত বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান চায়। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জামায়াত এখনো ধোঁয়াশায় রয়েছে। এই প্রশ্নে একটি জাতীয় সমঝোতা দরকার।”

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কৃতিত্বের প্রশ্ন। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, “জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে ‘আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু এটি পুরোপুরি মতপার্থক্য, না কি নির্বাচনী কৌশলের অংশ— তা এখনই নিশ্চিত করে বলা কঠিন।”

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াতের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব দেখিয়ে এনসিপি হয়তো একটি উদার ও গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে চাইছে।”

অন্যদিকে, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের মতে, “ভিত্তিহীন বিভক্তি পুরো জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কোনো ফাঁদে পড়া হচ্ছে কিনা, সেটাও ভাবার সময় এসেছে।”

এনসিপির সাম্প্রতিক বিবৃতিতেও জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে ১৯৭১ সালের বিরোধীদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বলা হয়। এতে রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সীমারেখা টানার একটি প্রচেষ্টা চোখে পড়ে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অস্থায়ী সরকারের সময়কালে এই দুই দলের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করবে মুক্তিযুদ্ধ, ইসলামপন্থা ও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে তাদের অবস্থানের ওপর। এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে, না কি নতুন কোনো ইস্যুতে তারা আবারও একত্রিত হবে— সেটি সময়ই বলে দেবে।