চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে মরনঘাতি মশাবাহিত এনকেফালাইটিস রোগের প্রাদুর্ভাব

ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি মশাবাহিত রোগের মধ্যে আরেক আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে জাপানিজ এনকেফালাইটিস। মূলত কিউলেক্স মশার কামড়ে এ রোগটি ছড়ায়। মারাত্মক এ রোগে আক্রান্ত প্রতি চারজনে একজনের মৃত্যু ঘটতে পারে। সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হলেও ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। হিসেবে রোগটিতে মোট আক্রান্তের চার ভাগের তিন ভাগই এ বয়সী। এ রোগে আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনে রয়েছে চট্টগ্রাম।

‘জাপানিজ এনকেফালাইটিসের ঝুঁকি, বিস্তার, প্রতিরোধ ও টিকা বিষয়ে অবহিতকরণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘মা, নবজাতক শিশু এবং কিশোর–কিশোরীর স্বাস্থ্য’ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এক জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয় কর্মশালায়। দেশে গত দশ বছরে জাপানিজ এনকেফালাইটিস সংক্রমণের পরিসংখ্যান (চিত্র) তুলে ধরা হয়েছে জরিপে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চল রংপুর বিভাগ। এ অঞ্চলে ৪৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ৩০ শতাংশ রোগী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রাজশাহী অঞ্চল। শীর্ষ তিনে রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। এ অঞ্চলে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সব বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। তবে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। হিসেবে আক্রান্ত প্রতি চারজনের তিনজনই শিশু।

কিউলেক্স মশার কামড়ে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগ মস্তিস্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত মশার কামড়ের ৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (ভুল বকা) ও অজ্ঞান হওয়া। এসবের মধ্যে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (ভুল বকা) ও অজ্ঞান হওয়া উপসর্গকে গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গুরুতর এসব লক্ষণযুক্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় চট্টগ্রামে রোগটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, সব হাসপাতালে রোগটি নির্ণয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। দেশের ৮২টি সরকারি ও ২১টি বেসরকারি হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা চলছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে মোট ১৭ হাজার ৩৪৯ জন শিশু রোগী চিকিৎসা নেয়। এর মাঝে ৬৮৪ জন রোগী খিঁচুনি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২১৭ জনের জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগ শনাক্ত হয়। তবে রোগ নির্ণয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সন্দেহজনক আরো অনেক রোগীর এ রোগ শনাক্ত করা যায়নি।

অনুষ্ঠানে ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগে রোগতত্ত্ব’ বিষয়ে উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফা নাজনীন। ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগের সার্ভিল্যান্স তথ্য’ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির ডা. শারমিন সুলতানা। ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগের চিকিৎসা খরচ’ বিষয়ে উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর বির প্রধান গবেষক ড. রেবেকা সুলতানা। ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিস টিকা বিষয়ে উপস্থাপন করেন ডা. কামরান মেহেদী।