চলমান সংবাদ

ছাত্রীদের নির্যাতন ও খেলতে না দেওয়ায় মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ শিক্ষিকার

অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাবাডি টিম গঠন করে খেলার জন্য স্কুলের ছাত্রীদের তৈরি করেছিলেন ওই স্কুলেরই সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন। কিন্তু ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলায় কাবাডি টিমের ছাত্রীদের শারীরিক নির্যাতন করেন ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষিকা। এমনকি তিনি ছাত্রীদের অংশ নিতে দেননি।

প্রধান শিক্ষিকার এই ধরনের কর্মকান্ডের প্রতিবাদে নিজের মাথা ন্যাড়া করে সামাজিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। চাকরি থেকেও অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি। নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ফিরিঙ্গি বাজারস্থ ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনাটি ঘটে। ওই বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শিক্ষক জাহিদা পারভীন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে জানানোর পর ভাইরাল হয়ে যায়। সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের বকা, অপমান ও চুল ধরে টানাটানির প্রতিবাদে মাথা ন্যাড়া করেন জাহিদা। এ নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। স্টাটাসে তিনি লেখেন, ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়ার অপরাধে আমার স্কুলের হেডমাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে?

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা এবিষয়ে জানতে শিক্ষিকা জাহিদা পারভীনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। তারা ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহ করেন।

জাহিদা পারভীন জানান, থানা পর্যায়ের গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রীর একটি কাবাডি দল গঠন করা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর ম্যাচ ছিল। কাবাডির নিয়ম অনুযায়ী চুলে ক্লিপ লাগানো যায় না। চুল চোখের সামনে চলে আসায় মেয়েদের খেলতে অসুবিধা হয়। এ কারণে তারা ফ্রেঞ্চ স্টাইলে বেণী করে।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের এক দিন আগে অংশগ্রহণকারী দলের ছবি তুলে কো-অর্ডিনেটরের কাছে জমা দিতে হয়। ছাত্রীদের মাঠে নামানোর আগের দিন (৭ সেপ্টেম্বর) ছাত্রীদের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ছবি তোলার জন্য ছাত্রীদের জার্সি পরে তৈরি হতে বলি। তারা বেণী করে জার্সি পরে তৈরি হয়। এর মধ্যে আমি টয়লেটে যাই। সেখান থেকেই আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাই। টয়লেট থেকে বের হয়ে শুনি- প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের বকাঝকা করেছেন। কয়েকজন ছাত্রীকে চুল ধরে মারধর করেছেন। তখন দুই মেয়েকে কান্না করতে দেখি।

প্রধান শিক্ষিকাকে জানাই যে, আমি ছাত্রীদের বেণী করতে বলেছি। এ কথা শুনে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে ছাত্রীদের সান্তনা দিই। প্রধান শিক্ষিকার কারণে খেলার দিন আমরা নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে পৌঁছাতে পারিনি। তিনি ইচ্ছকৃতভাবে আমাদের দেরি করিয়ে দেন। একারণে ম্যাচে অংশ নিতে পারিনি। এতে প্রতিপক্ষ ওয়াকওভার পেয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী ও কোতোয়ালী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

# ২৩.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #