উদীচী-ছায়ানট, প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ধ্বংসযজ্ঞ, যুবককে পুড়িয়ে মারার নিন্দা – অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না : চট্টগ্রাম জেলা সিপিবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ উসমান বিন হাদীর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঢাকায় উদীচী, ছায়ানট, দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে গাছে ঝুলিয়ে এক যুবককে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দিনে-দুপুরে ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্যে গুলি করে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ উসামন বিন হাদীকে হত্যার ঘটনা পুরো দেশবাসীকে নাড়া দিয়েছে। বিবেকমান মানুষ মাত্রই এতে শোকগ্রস্ত হয়েছেন, হত্যার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সিপিবিও এমন হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে হাদীকে মৃত ঘোষণার পর তাঁর অনুসারী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে পুঁজি করে ঢাকায় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। দেশের দুটি শীর্ষ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক, গণমাধ্যম কর্মী সেই আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের কার্যালয়ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। এরপর শুক্রবার রাতে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর কার্যালয়েও আগুন দেওয়া হয়েছে। হাদীর দুঃখজনক মৃত্যুর পর মব তৈরি করে এমন বীভৎস, নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞে দেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। হাদীর মৃত্যুর সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত মুক্তিবুদ্ধি চর্চার প্রতিষ্ঠান ছায়ানট-উদীচী কীভাবে জড়িত কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন টার্গেট করা হল, সেটাই দেশের জনগণের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকছে।
একই সময়ে দেখা গেছে, ময়মনসিংহে কথিত ধর্ম অবমাননার অজুহাত তুলে দিপু চন্দ্র দাস নামে এক যুবককে মব সৃষ্টির মাধ্যমে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে বিকৃত উল্লাস করতে করতে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। একটি সভ্য সমাজে এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড কল্পনাও করা যায় না। এই ঘটনায় দেশের বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
আরও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে এসব বিভৎস বর্বরতা চললেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বরাবরের মতোই নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছে। সরকার এই ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতায় ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশ আজ উগ্রবাদের চারণভূমি হতে চলেছে। আমরা সরকারের কাছে সারাদেশে গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল প্রগতিশীল সংগঠন এবং সর্বস্তরের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের জোর দাবি উত্থাপন করছি।
আমরা এই ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বলতে চাই, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে যেভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে, ছায়ানট-উদীচীর কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগ এর সঙ্গে একই সূত্রে গাঁথা। সরকারের নীরব প্রশ্রয়ে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে ধারাবাহিকভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। মবতন্ত্রের মাধ্যমে তারা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা সবকিছু মুছে দিতে চায়।
সরকারের প্রতি আহ্বান, এই মবতন্ত্র, সহিংস উগ্রবাদের লাগাম টেনে ধরুন। এই অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ঘোষিত সময়ে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণই দেশকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে পারবে বলে আমরা মনে করি।
