লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে সরকার–এপিএম চুক্তি, দ্রুত ইজারা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিবাদ
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ সরকার। সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চুক্তিতে সই করেন। এতে বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সরকার বলছে, চুক্তিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের লজিস্টিকস খাতকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই প্রকল্প বর্তমান সরকারের বড় অর্জন এবং এ নিয়ে যাঁদের সন্দেহ ছিল, তা আজ দূর হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মোংলা বন্দর পরিচালনাতেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, লালদিয়া প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে পিপিপি শুধু কৌশল নয়, বাস্তবেও কার্যকর মডেল। তিনি জানান, আগামী কয়েক বছরে আরও চারটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, সহযোগিতা থেকে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বে পৌঁছে দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায়। তাঁর মতে, লালদিয়া প্রকল্প বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন মাইলফলক হবে। পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া একটি অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল হিসেবে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করবে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে।
এদিকে চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। সংগঠনটি বলছে, লালদিয়া টার্মিনাল এবং পানগাঁও নৌ টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের কাছে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে ইজারা দেওয়ার এই পদক্ষেপ “গণবিরোধী, অস্বচ্ছ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী।” স্কপের অভিযোগ, শ্রমিক–কর্মচারী, ব্যবসায়ী মহল ও দেশের জনগণের মতামত না নিয়েই কৌশলগত স্থাপনার ওপর দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্কপ নেতারা বলেন, সরকার যদি অবিলম্বে লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালের ইজারা চুক্তি বাতিল না করে, তাহলে আগামী ২২ নভেম্বরের কনভেনশন থেকে হরতাল ও ঢাকা–চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোড অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে। তারা আরও অভিযোগ করেন, আগামী সপ্তাহে এনসিটি নিয়েও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং বাণিজ্য, শ্রমবাজার ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার, তপন দত্ত, এস কে খোদা তোতন, রিজউয়ানুর রহমান খান, তসলিম হোসেন সেলিম, ইব্রাহীম খোকন, নুরুল আবসার তৌহিদ, খোরশেদুল আলম, নুরুল আবসার, জাহেদ উদ্দিন শাহিন ও হেলাল উদ্দিন কবিরসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।

