চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামের মানুষ বন্দর নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত সফল করতে দেবে না” — কমরেড শাহ আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক:
লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ না করলে নভেম্বরের শেষে যমুনা ঘেরাও এবং প্রয়োজনে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশী অপারেটরের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ৯ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিক্ষোভ, গণসংযোগ ও পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে যমুনা ঘেরাও, এবং পরবর্তী সময়ে হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলে সমাবেশে নেতারা জানান।

শনিবার (৮ নভেম্বর ২০২৫) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রামের পুরাতন স্টেশন চত্বরে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশ থেকে এই ঘোষণা আসে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক এড. শফি উদ্দিন কবির আবিদ। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাবেক সভাপতি কমরেড শাহ আলম।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে কমরেড শাহ আলম বলেন,
“বন্দরের পরিচালনা বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে একগুঁয়ের মতো আচরণ করছে। দেশের শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ প্রবল অর্থনৈতিক সংকটসহ হাজারো সমস্যায় পর্যুদস্ত, অথচ সরকারের সেদিকে মনোযোগ নেই—তারা বন্দর, করিডোর নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে চক্রান্তে ব্যস্ত। চট্টগ্রাম সূর্যসেন, প্রীতিলতার মাটি। চট্টগ্রামের মানুষ বন্দর নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত সফল করতে দেবে না।”

তিনি আরও বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ এই বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এ ধরনের কৌশলগত সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার যেকোনো সিদ্ধান্ত কেবল অর্থনৈতিক নয়, জাতীয় নিরাপত্তার সাথেও সরাসরি সম্পর্কিত।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন নাসু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর নেতাকর্মীরা বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন ও সংহতি প্রকাশ করেন।

নেতারা বলেন, সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ—বিশেষ করে বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি—বিদেশী টার্মিনাল অপারেটরদের (যেমন ডিপিওয়ার্ল্ড, এপিএম টার্মিনালস, পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল) স্বার্থ রক্ষার অংশ। এতে আমদানি-রপ্তানির খরচ বৃদ্ধি পেয়ে দেশের শিল্প, কৃষি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্দর পরিচালনায় জাতীয় সক্ষমতা গড়ে তোলা হলো না এবং কেন জাতীয় বন্দর নীতি প্রণয়ন করা হয়নি।

সমাবেশ শেষে একটি মশাল মিছিল পুরাতন স্টেশন থেকে শুরু হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।