চলমান সংবাদ

এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা দেয়ার পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের গণ অনশন

চট্টগ্রাম, ১ নভেম্বর ২০২৫:

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়ার চর ইজারা দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর উদ্যোগে আজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এক গণ অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

অনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্কপ কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের খোরশেদুল আলম, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ.ম. জামাল উদ্দিন, ডক শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মছিউদ্দৌলা, স্কপের যুগ্ম আহ্বায়ক রিজোয়ানুর রহমান খান, বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি নুরুল আবসার তৌহিদ, জাহেদ উদ্দিন শাহিন, শানেওয়াজ চৌধুরী মিনু, ইফতেখার কামালখান, বিএফটিইউসি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক হুনি, আল কাদেরী জয়, ইদ্রিছ মিয়া, এডভোকেট ইকবাল হোসেন, নারী নেত্রী শাহনেওয়াজ চৌধুরী মিনু, রেখা রানি বড়ুয়াসহ স্কপভুক্ত শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টিইউসি’র কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু

বক্তব্যে মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এনসিটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে সফল কনটেইনার টার্মিনাল। অথচ এটিকে বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও আত্মঘাতী। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের একটা কনটেইনার টার্মিনাল, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল, সেটা ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ডিপি ওয়ার্ল্ড কারা ? তারা দেশে-দেশে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর চক্রান্ত বাস্তবায়নে কাজ করে। লালদিয়ার চরও বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য আজ শ্রমিক-কর্মচারী ভাইয়েরা অনশনে বসেছেন। এভাবে আমরা ১৯৯৬ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠান এসএসএ পোর্টকে চট্টগ্রাম বন্দর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সেটা ঠেকিয়েছিলাম।’

‘এই ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ডেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এনেছিল আওয়ামী লীগ। তাদের পতন হয়েছে, অথচ অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। বন্দরকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করলেও আমাদের একইসঙ্গে আরও কিছু বিষয় বুঝতে হবে। এই যে ডিপি ওয়ার্ল্ড, স্টারলিংক আর আরাকানে করিডোর- তিনটি বিষয় একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ভূরাজনৈতিক চক্রান্তের সাথে এসব বিষয় জড়িত।’

তপন দত্ত বলেন, “বিগত সরকারের সময়ে নেয়া এই একতরফা সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহাল রেখেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার এই চক্রান্ত জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। সরকারকে অবশ্যই এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় চট্টগ্রাম হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে অচল করে দেয়া হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনগণের সম্পদ রক্ষা করা, বিক্রি বা ইজারা দেয়া নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। একই সঙ্গে বন্দর শ্রমিকদের হয়রানি ও অযৌক্তিক কারণ দর্শানো নোটিশের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

বক্তারা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাম্প্রতিক গণবিজ্ঞপ্তিতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, “প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা বা পুলিশি বাধা দিয়ে কোনো ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করা যায়নি, এবারও যাবে না। শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁদের অধিকার আদায়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে।”

অনশন কর্মসূচিতে স্কপ নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন— সরকার যদি অবিলম্বে এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা বাতিলের ঘোষণা না দেয়, তবে সার্বিক কর্মবিরতি, চট্টগ্রাম হরতাল ও বন্দর অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

বিকাল ৪টায় শরবত পান করিয়ে অনশন ভংগ করেন কবি সাংবাদিক আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল করিম কচি, সিনিয়র সাংবাদিক জসিম চৌধুরী সবুজ এডভকেট আক্তার কবির চৌধুরী প্রমুজখ

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেনক গণ মুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি রাজা মিয়া, বাসদ মার্কবাদী এর সমন্ব্যক শফি উদ্দিন কবির আবিদ, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ, যবু ইউনিয়নের জাতীয় পরিষদ সদস্য মেহেদী হাসান মিন্টু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা মিরাজ উদ্দিন, সমাজ কর্মী তানভীর হোসেনজাহেদুন্নবি কনক, উম্মে হাবিবা শ্রবানী,

পরবর্তী কর্মসূচিঃ

৮ নভেম্বর বিকাল ৩টায় লালদীঘির মাঠ থেকে পুরাতন রেল স্টেশন পর্যন্ত গণমিছিল এবং ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক কনভেনশন।