বন্দরে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে মহানগর বিএনপির নিন্দা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।
কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রাক–প্রস্তুতি এবং গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের কোনো জাতীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইখতিয়ার এ সরকারের নেই। এটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এই প্রক্রিয়া থেকে সরে না এলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক–কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যেকোনো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে বন্দর চেয়ারম্যানের প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের উপর আরোপিত বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করাসসহ তিন দফা দাবি জানানো হয়। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে– কর্মচারীদের ওপর আরোপিত শোকজ প্রত্যাহার করা।
তৃতীয় দাবিতে বলা হয়, যেহেতু এ মুহূর্তে দেশে কোনো জরুরি অবস্থা নেই, সেহেতু সংবিধান ও শ্রম আইনের আলোকে কর্মচারীদের সংগঠন ও স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হোক।
এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিসহ তিনটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলসহ চট্টগ্রাম বন্দরের অন্যান্য শ্রমিক ও কর্মচারী সংগঠন বিভিন্ন সভা–সমাবেশ, মানববন্ধনসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। এজন্য সমপ্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের ওপর প্রশাসনিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং বেশ কিছু কর্মচারীকে গত ২৬ অক্টোবর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের উপর প্রশাসনিক বিধিনিষেধ আরোপ এবং কারণ দর্শানো নোটিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাসমূহ বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত সংগঠন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮)-এর ধারা ১৭৯, ১৮০ ও ১৮১ অনুযায়ী শ্রমিক–কর্মচারীদের বৈধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার লঙ্ঘন করে।
নগর বিএনপি’র দুই শীর্ষ নেতা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া এ পদক্ষেপগুলো বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রাক–প্রস্তুতি এবং গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। এই ধরনের কোনো জাতীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইখতিয়ার অনির্বাচিত সরকারের নেই। এটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এই প্রক্রিয়া থেকে সরে না এলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক–কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যেকোনো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
এরশাদ উল্লাহ ও নাজিমুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান; এটি কোনো প্রতিরক্ষা সংস্থা নয়। তাই এই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক–কর্মচারীদের সংগঠিত হওয়া ও ট্রেড ইউনিয়নে অংশগ্রহণের অধিকার সীমিত বা বাতিল করার আইনগত ভিত্তি নেই। এ ধরনের প্রশাসনিক নিপীড়ন কর্মচারীদের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায় না করে দমনের অপচেষ্টা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি মনে করে, শ্রমিক–কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার দমন করে কোনো প্রতিষ্ঠানেই স্থিতিশীলতা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়; বরং সংলাপ, সহযোগিতা ও ন্যায়সংগত আচরণই একটি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক উদাহরণ হতে পারে।

