জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর নতুন বিভাজন -সংবিধান সংস্কার নিয়ে কমিশনের সুপারিশে বিএনপির তীব্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আগের মতভিন্নতা নতুন করে তীব্র আকার নিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দেওয়ার পর বিএনপি এর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যদিও জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সুপারিশকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
রাজনৈতিক মহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে শেষ মুহূর্তে এ বিভাজন জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।
গতকাল বুধবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবেন। যদি এর বাইরে যান, তার দায় আপনাকেই নিতে হবে।’
বিএনপি অভিযোগ করেছে, কমিশনের দেওয়া সুপারিশে দলের দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএনপির মতে, এটি ঐক্য নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতারণা।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “ভিন্নমতের ভিত্তিতে কখনো সিদ্ধান্ত হয় না; সিদ্ধান্ত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে। কমিশনের সুপারিশে সবার ঐকমত্যই প্রতিফলিত হয়েছে।”
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে সংবিধান-সংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের ওপর গণভোটের সুপারিশ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে অন্তত ৩৬টি প্রস্তাবে এক বা একাধিক দলের ভিন্নমত আছে।
বিএনপি চায়, জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক, যাতে নতুন সংসদকে আলাদা কোনো ক্ষমতা দিতে না হয়। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি চাইছে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট এবং একটি “জুলাই বাস্তবায়ন আদেশ” জারি করে তা কার্যকর করা হোক।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সুপারিশে নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ নেই, এটি কোনো ঐকমত্য নয়।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের ও সরকারের কিছু পদক্ষেপে জাতিতে ঐক্যের বদলে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। জুলাই সনদে যে ঐকমত্য হয়েছিল, তা সুপারিশে প্রতিফলিত হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “রেফারিকে আমরা গোল দিতে দেখিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কমিশন, সরকার ও কিছু দল একই পক্ষ হয়ে গেছে।”
উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদের মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টি সংবিধান-সংক্রান্ত দফা তফসিল আকারে প্রকাশের সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রস্তাবগুলোর অনেকগুলোতেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থেকে গেছে।
