লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া চলবেনা -বাসদ(মার্কসবাদী)
লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ ও বন্দরের বর্ধিত মাশুল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা নেতৃবৃন্দ। ১৬ অক্টোবর,২০২৫,সকাল ১১ টায় সংগঠন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের জেলা কমিটির সভা হতে এ আহবান জানানো হয়। বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক শফিউদ্দিন কবির আবিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দলের জেলা কমিটির সদস্য আসমা আক্তার, জাহেদুন্নবী কনত, দীপা মজুমদার, রিপা মজুমদার।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন,“ বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির ৯২ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিযে হয়। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি প্রধানতঃ চট্টগ্রাম বন্দরের উপর নিভর্রশীল। বন্দরের মত কৌশলগত সম্পদ নিয়ে যেকোন সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক লাভ দিয়ে বিচার করা যায়না, দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক-সামরিক নিরাপত্তা, ঝুঁকি ইত্যাদি অনেকগুলো স্পর্শকাতর বিষয় এর সাথে যুক্ত। বিশেষ করে যেখানে আমাদের একটিমাত্র প্রধান বন্দর এবং এর বাইরে মাত্র ৩ টা অগুরুত্বপূর্ণ বন্দর আছে, সেখানে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে এর কোনো অংশ তুলে দেওয়া আরও ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ যেসব দেশের সাথে তুলনা দেওয়া হচ্ছে,সেসব দেশের বন্দরের গভীরতা, বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে নৌ, রেল,সড়কপথে আলাদা করিডোরের ব্যবস্থা- কিছুর সাথেই কি বাংলাদেশের তুলনা খাটে? সিঙ্গাপুর বন্দরের গভীরতা ১৬ মিটার, শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের গভীরতা ১৮ মিটার, ভিয়েতনামের সায়গন বন্দরের গভীরতা ১১ মিটার। এই বন্দরগুলোতে গভীরতার কারণে অনায়াসে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে, যেটা চট্টগ্রাম বন্দরে সম্ভব না।কারণ চট্টগ্রাম বন্দর নদী বন্দর হওয়ায় জোয়ারের সময় গভীরতা থাকে সাড়ে ৯ মিটার,ভাটার সময় গভীরতা থাকে ৬/৭ মিটার। নাব্যতার এই সীমাবদ্ধতার কারণে বড় জাহাজ এই বন্দরে ভিড়তে পারে না। প্রাকৃতিক এই সীমাবদ্ধতা কোন বিদেশী অপারেটরের পক্ষে দূর করা সম্ভব নয়। ফলে এই বন্দরের সক্ষমতা একটা সীমার বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়।ফলে বিদেশের সাথে প্রেক্ষিতবিহীন তুলনা দিয়ে বিদেশী কোম্পানির হাতে নিউমুরিং টার্মিনাল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক থাকার পরেও বিদেশী কোম্পানির স্বার্থে বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে সরকার। এতে দেশে আমদানি রপ্তানির খরচ বাড়লেও লাভবান হবে ডিপিওয়ার্ল্ড, এপিএম টার্মিনালস, পিএসএ ইন্টারন্যাশনালের মতো বিদেশী টার্মিনাল অপারেটর, যাদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল ইজারা দেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) পরামর্শে এই মাশুল বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া—এই সাত দেশের ১৪টি বন্দরের মধ্যে ১৩টি বন্দরের মাশুলের চেয়ে চট্টগ্রামের মাশুল বেশি হবে।এর সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের শিল্প-কৃষিসহ সমস্ত সেক্টরে।যার ফলে সব ক্ষেত্রেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে,যার পুরো বোঝা বইতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকেই।বিদেশী কোম্পানির লাভের জন্য যারা দেশের জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারে ,তারা দেশদ্রোহী ছাড়া কিছু নয়।”
নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে চট্টগ্রামের সমস্ত রাজনৈতিক-সামাজিক –সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণকে আহবান জানান।