জনগণের ঐক্যেই শক্তি, সমাজ বদলের সংগ্রামে সিপিবির আহ্বান

‘শোষণ-বৈষম্যবিরোধী বাম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা’—এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তাদের ত্রয়োদশ জাতীয় কংগ্রেসে জনগণের শক্তিকে সংহত করে একটি কার্যকর, শক্তিশালী ও সময়োপযোগী পার্টি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে আয়োজিত কংগ্রেসের তৃতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশনে রবিবার দলটির রাজনৈতিক প্রস্তাব, কর্মসূচি এবং ভবিষ্যৎ কৌশল অনুমোদন করা হয়। প্রস্তাব উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী রতন।
‘লেনিনীয় নীতি’কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার
সিপিবি’র রাজনৈতিক প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়, লেনিনীয় সাংগঠনিক নীতির ভিত্তিতে পার্টিকে নতুন প্রেক্ষাপটে ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচনী সংগ্রাম, জনসংগঠনের বিস্তার ও বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, শোষণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হলে ‘লুটেরা বুর্জোয়া ধারার’ বাইরে বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার ভিত্তিতে দেশে একটি শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা বলা হয়।
বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ার ডাক
সিপিবি মনে করে, রাষ্ট্রক্ষমতার প্রকৃত রূপান্তর না ঘটলে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ‘বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন’। রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়, ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণে একটি প্রগতিশীল ও জাতীয় স্বার্থনির্ভর রাজনৈতিক কর্মসূচি গড়ে তুলতে হবে—যা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও জনগণের প্রকৃত চাহিদার প্রতিফলন ঘটায়।
ফ্যাসিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই
প্রস্তাবে দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রীয় দমননীতি, ফ্যাসিস্ট প্রবণতা এবং জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়। এসব হুমকির বিরুদ্ধে সিপিবিকে ‘আপসহীন, দায়িত্বশীল ও নেতৃত্বমূলক’ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়।
গণতান্ত্রিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনার চেষ্টা
কংগ্রেসে সারাদেশ থেকে আগত ৪৫ জন প্রতিনিধি রাজনৈতিক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। পরে গঠনতন্ত্র সংশোধন, ক্রেডেনশিয়াল রিপোর্ট, অডিট কমিটির রিপোর্ট ও কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট উপস্থাপন ও অনুমোদন করা হবে।
কংগ্রেসের চূড়ান্ত দিনে অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় কমিটি, জাতীয় পরিষদ ও কন্ট্রোল কমিশনের নির্বাচন। সমাপনী ভাষণের মাধ্যমে এবং ঐতিহাসিক কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
