কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শকের সাথে টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রাম, ২২ আগস্ট:
শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদান এবং শ্রম আইন বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তন ভবনে অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক জনাব মাহমুদুল হাসান।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন। প্রধান অতিথি ছিলেন টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য শ্রমিকনেতা তপন দত্ত। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক পরাগ দাশ। এছাড়া দপ্তরের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন টিপু সুলতান, বিশ্বজিত শর্মা, শামিম হোসেন ও মাসুদ রানা। টিইউসির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান, ফজলুল কবির মিন্টু, আব্দুর রহিম, মো. হানিফ, আনিসুর রহমান বাবুল, মহিন উদ্দিন, মো. পারভেজ, জামাল উদ্দিন ও নতুন দাশসহ একাধিক শ্রমিকনেতা।
বিভিন্ন খাতের সমস্যার চিত্র উপস্থাপন
সভায় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ, কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেশন, জাহাজভাঙা শিল্প, স্টিল মিল, বিউটি পার্লার এবং মৎস্যজীবী খাতের প্রতিনিধিরা তাঁদের নিজ নিজ খাতের সমস্যা ও সংকট তুলে ধরেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, এসব খাতে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এখনও নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সবেতন ছুটি, সুরক্ষা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। দুর্ঘটনা ও পেশাগত ঝুঁকির শিকার হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ পাওয়া অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চিত থাকে।
জাহাজভাঙা শিল্পের প্রতিনিধিরা জানান, কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ঘটনার কারণে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটে, অথচ শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ এখনো যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। নির্মাণ ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতের শ্রমিকনেতারা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও শ্রম আইন বাস্তবায়নের ঘাটতির বিষয়টি জোর দিয়ে তুলে ধরেন।
উপ মহাপরিদর্শকের আশ্বাস
সব বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনার পর উপ মহাপরিদর্শক জনাব মাহমুদুল হাসান বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তিনি স্বীকার করেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। একইসাথে তিনি শ্রমিকনেতা ও সংগঠনগুলোর উদ্দেশে বলেন, ভবিষ্যতে যেকোনো সংকট বা অভিযোগ দেখা দিলে তা সাথে সাথে অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হবে, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
শ্রমিক নেতা তপন দত্তের বক্তব্য
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা তপন দত্ত বলেন, শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন জরুরি। তিনি বলেন, “নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদান, সবেতন ছুটি নিশ্চিতকরণ এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বাস্তবায়ন ছাড়া শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়।”
তপন দত্ত বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান খাতের সংকট বিশেষভাবে তুলে ধরে বলেন, এই খাতে কর্মরত শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। তিনি অবিলম্বে এ খাতে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি জানান। একইসাথে তিনি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের প্রয়োজন
মতবিনিময় সভায় আলোচকরা আরও উল্লেখ করেন, শিল্প খাতের সম্প্রসারণের সাথে সাথে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। বক্তারা মনে করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
সভা শেষে শ্রমিকনেতারা মতবিনিময় আয়োজনের জন্য উপ মহাপরিদর্শককে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে নিয়মিত এমন সভা আয়োজনের দাবি জানান।