সংবিধান সংস্কার: প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সামান্য কমবে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কিছুটা বাড়বে
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা সীমিত করার প্রস্তাব সামনে এলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের কারণে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ভাগ করে নিতে হবে, তবে সামগ্রিকভাবে তার কর্তৃত্ব অল্পই কমছে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা
সংস্কারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন—এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হিসেবে এক ব্যক্তি থাকার প্রথা বন্ধ করার প্রস্তাব উঠলেও বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভিন্নমত দিয়েছে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আগে যেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর লাগত, এখন তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ভিত্তিতে হবে। এ বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হবে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ
গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বাছাই কমিটি প্রার্থী বাছাই করবে। পরে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
তবে ন্যায়পাল, সিএজি, দুদক ও পিএসসি–তে নিয়োগ নিয়ে এখনো রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়নি। বিএনপি ও সমমনোভাবাপন্ন কয়েকটি দলের আপত্তির কারণে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি
সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল, আইন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবেন। যদিও বিএনপিসহ কয়েকটি দল গভর্নর ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নিয়োগ রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে।
সংসদে জবাবদিহি
সংসদে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সভাপতি বিরোধী দলের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি হিসাব, অনুমিত হিসাব, বিশেষ অধিকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি—এসব কমিটি এখন থেকে বিরোধী দল নেতৃত্ব দেবে।
এ ছাড়া ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে। উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যার অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন বরাদ্দ হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, “যতখানি ঐকমত্য হয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রীর কিছু ক্ষমতা কমবে। তবে আরও কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া উচিত ছিল।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, “প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ, সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের নেতৃত্ব, ইসি গঠনে পরিবর্তন—এসব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। সব না হলেও এগুলো বড় ধরনের পদক্ষেপ।”
সারসংক্ষেপ
সব মিলিয়ে বলা যায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা সামান্য কমবে এবং রাষ্ট্রপতির হাতে কিছু বাড়তি ক্ষমতা আসবে। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ভিন্নমতের কারণে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।