মৌলিক সংস্কারে শর্তযুক্ত একমত উদ্বেগজনক: টিআইবি নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রীয় মৌলিক সংস্কারে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর শর্ত সাপেক্ষে একমত হওয়াকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘এভাবে শর্তসাপেক্ষে একমত হওয়া ভবিষ্যতে বাস্তবায়নের পথে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’’
সোমবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি পরিচালিত ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কী হবে এবং তা মানার বাধ্যবাধকতা কী—এসব বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। ফলে সংস্কারের আশায় ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে এবং রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।’’
ড. ইফতেখারুজ্জামান রাজনৈতিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘‘দলীয় কাঠামো ও আচরণে গণতন্ত্র না থাকলে তারা জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে কীভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেই।’’
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো. জুলকারনাইন। পরে সার্বিক মূল্যায়ন তুলে ধরেন নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন টিআইবির পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান ও উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের।
টিআইবির মতে, এক বছর পেরিয়ে গেলেও ১১টি সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ পাশ কাটিয়ে এক-দুটি বিষয়ে অ্যাডহক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে সংস্কারের নামে আরও জটিলতা সৃষ্টি করছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের শতাধিক সুপারিশের মধ্যে শৌচাগার পরিষ্কারের মতো বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’’
তিনি অভিযোগ করেন, প্রথম দফার ছয়টি সংস্কার কমিশনকে তুলনামূলক অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও, নারী, শ্রম, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম ও স্থায়ী সরকার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা বা দিকনির্দেশনা নেই।
৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘এই সময়কালটি ছিল অশুভ। দলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা–বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দলের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এসব কার্যকলাপ বন্ধ হয়নি।’’
তিনি আরও বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে এসেছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমেও হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে—যা অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি সুপারিশ করে, রাজনৈতিক সংস্কারকে মূলধারার আলোচনায় আনতে হবে এবং সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে সময়সীমা ও আইনগত কাঠামো স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
