চলমান সংবাদ

মাইলস্টোন দুর্ঘটনা, ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি ও নির্বাচন: চাপের মুখে সরকার ও প্রশ্নবিদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক গভীর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে—রাষ্ট্র কীভাবে চলছে, কারা চালাচ্ছে, আর কারা দায় এড়াচ্ছে?

ঢাকার গুলশানে সাবেক এক মহিলা এমপির বাড়িতে গিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামের একটি সংগঠনের পাঁচজন নেতা চাঁদা দাবি করে। প্রথমে ১০ লক্ষ টাকা নিলেও, দ্বিতীয় দফায় আরও ৪০ লক্ষ টাকা আনতে গেলে পুলিশ তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এরপরই এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া বাকি সব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়—যা জনরোষ সামাল দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিতে হয়।

সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায় , তারা একটি নতুন কৌশল নিয়েছিল—প্রথমে টার্গেট রাজনৈতিক নেতার বাসায় তল্লাশি চালাতে পুলিশকে ব্যবহার করে, আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং পরে নিজেরাই গিয়ে অর্থ দাবি করে। এটি যদি সত্য হয়, তবে এটি ভয়ঙ্কর—রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে চাঁদাবাজি বা ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নয়।

এদিকে, একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কর্ণধার মোস্তাফা ফিরোজের ভাষ্যমতে, দুই থানার ওসি তাকে ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ করেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের কারণে তারা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এ থেকে স্পষ্ট, সরকারের মদদপুষ্ট বা প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা কিছু সংগঠন রাষ্ট্রের ভিতরেই আরেকটি ‘ছায়া রাষ্ট্র’ তৈরি করছে। অবশ্য কয়েকদিন আগে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও একই অভিযোগ করেছেন।

ঠিক এই সময়েই ঘটে যায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনা, যা স্মরণকালের ভয়াবহ ঘটনা। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানোর অনুমতি এত বছর ধরে কিভাবে বহাল ছিল, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। কেউ নজর দিল না কেন? এত বড় দুর্ঘটনার দায় কে নেবে?

এমন দুর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো এই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আবারও চোখ এড়িয়ে যেত।

ঢাকা বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকায় স্কুল পরিচালনার সিদ্ধান্ত, প্রশিক্ষণ বিমান চালনার অনুমতি—সব কিছুই এখন প্রশ্নের মুখে। এই ভয়াবহ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সবার মধ্যে দারুণ ভীতি ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

পড়ুন:  রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে: টিআইবি

এই দুর্ঘটনা শুধু একটি স্কুলকে নয়, সরকারকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। জনরোষ সামাল দিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক বৈঠক হয়। অনেক চাপে পড়েই হয়তো সরকার জানিয়েছে, আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুত সময়ের দুই দিন পার হলেও এখনও কোনো নির্দিষ্ট বার্তা আসেনি।

বরং  প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—“নির্বাচন বানচালের জন্য পরাজিত শক্তিরা ষড়যন্ত্র করছে।” কিন্তু সাধারণ মানুষ এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছে না। প্রশ্ন উঠছে—একদিকে ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি, অন্যদিকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা—এসব সামাল দিতে না পারলে নির্বাচনতো দূরের কথা রাষ্ট্রই অকার্যকর হয়ে যাবে।

বর্তমান বাস্তবতায় স্পষ্ট—রাষ্ট্র পরিচালনায় সমন্বয়হীনতা, জবাবদিহির অভাব এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দাপট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সরকার এখন চাপে, প্রশাসন বিভ্রান্ত, আর মানুষ ক্ষুব্ধ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ—স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অবিলম্বে বাস্তবায়ন। না হলে আগামী দিনগুলো আরও বেশি অস্থির ও অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।