সিইউএফএলে তিন মাসে ক্ষতি ৪০৫ কোটি টাকা
আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে কৃষি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তায় ১৯৮৮ সালে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় চালু হয় চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) সার কারখানা। শুরুতে ভালো উৎপাদন থাকলেও নানা গ্যাড়াকলে প্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গ্যাস সংকটের কারণে গত ৩ মাস ধরে এ প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা। আর বন্ধ কারখানায় প্রতি মাসে শ্রমিক–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা দিতে হচ্ছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এছাড়া মেরামত ব্যায় ও অন্যান্য খরচ হিসাব করলে কারখানাটি উৎপাদন সক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চাকরি হারানোর আতংকে আছেন প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার শ্রমিক–কর্মচারী। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই চালুর সম্ভাবনাও দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ দেয়। কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, সিইউএফএল কারখানা চালু রাখতে দৈনিক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন হয়। আনোয়ারার বৈরাগে অবস্থিত কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে (কাফকো) উৎপাদনে দৈনিক ৪২ থেকে ৪৩ মিলিয়ন গ্যাস প্রয়োজন হয়। বর্তমানে কাফকো কারখানায় গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও গত ১১ এপ্রিল থেকে টানা ৩ মাস ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে বিসিআইসি পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা হুমকিতে পড়েছে বলে কর্মরত শ্রমিক–কর্মচারীরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিইউএফএলের প্রতিষ্ঠাকালীন দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া এবং ১৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া অর্থাৎ বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা যথাক্রমে ৩,৩০,০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ৫,৬১,০০০ মে. টন ইউরিয়া (বছরে ৩৩০ দিন চালু হিসেবে) উৎপাদন হতো। ১৯৯১–৯২ অর্থবছরে এই কারখানায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ৩,৩৪,০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ৫,৮৫,৭৯১ মে. টন ইউরিয়া। একই অর্থবছরে কারখানাটি একটানা সর্বোচ্চ ২৪৮ দিন অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট এবং ২১৭ দিন ইউরিয়া প্ল্যান্ট চালু ছিল। কিন্তু গত এক দশক ধরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিংবা গ্যাস সংকটের কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া আর ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয়।
কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা জানান, এমনিতেই কারখানাটি মেয়াদ উত্তীর্ণ। তার ওপর নানামুখী ষড়যন্ত্র ও গ্যাস সংকটের কারণে বছরে কয়েক দফা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে লাভের থেকে বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে তাদের আবেদন, যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সার কারখানাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান বলেন, ১১ এপ্রিল থেকে টানা তিন মাস গ্যাস সংকটের কারণে সিইউএফএলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ও বিসিআইসিকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি। তাছাড়া এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।
তিনি বলেন, সিইএফএলে ১ হাজার শ্রমিক–কর্মচারী কর্মরত আছেন। প্রতি মাসে তাদের বেতন–ভাতা বাবদ সাড়ে তিন কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়। আর কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকলে দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই ধরনের কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। মেরামত ব্যয় বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাই সরকারের লাভজনক এই শিল্প প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে গ্যাস সরবরাহ অতি জরুরি।
তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে বছরে একাধিকবার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় তিন মাসের বেশি প্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব হয় না। এতে উৎপাদন কমে ১ লাখ মেট্রিক টনে চলে আসে। পুরো বছর এই প্রতিষ্ঠান চালু রাখা গেলে ৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি সার উৎপাদন সম্ভব হতো।