জরুরি অবস্থা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ঐকমত্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন প্রস্তাব বিএনপির
জরুরি অবস্থা জারি এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠিত হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাবে জামায়াতে ইসলামী আপত্তি জানিয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্বের দ্বাদশ দিনের আলোচনা হয়। এতে অংশ নেয় ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আলোচনার প্রধান এজেন্ডা ছিল—জরুরি অবস্থা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব।
জরুরি অবস্থায় মন্ত্রিসভার অনুমোদন বাধ্যতামূলক
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি আর এককভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন না। এখন থেকে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে। সেই বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে উপনেতাকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
একই সঙ্গে সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদে ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দের পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুচ্ছ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া জরুরি অবস্থায় মৌলিক কিছু অধিকার—যেমন জীবনের অধিকার এবং বিচারপ্রাপ্তির অধিকার—স্থগিত করা যাবে না বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির বিষয়েই ঐকমত্য
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়—যদি কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে যে জ্যেষ্ঠতম দুইজন বিচারপতির মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেবেন, এবং সেই দল নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহলে তারা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে।
জামায়াতে ইসলামী প্রথমে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও পরে তারা এতে সম্মত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির বিকল্পধর্মী প্রস্তাব
আলোচনার শেষভাগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য পাঁচটি বিকল্পপন্থার একটি খসড়া রূপরেখা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রয়োজনে পুরনো ত্রয়োদশ সংশোধনীর আদলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথাও বলা হয়।
বিএনপির প্রস্তাবের মূল পাঁচ ধাপ নিম্নরূপ:
১. রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন।
২. না পারলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে।
৩. তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি যুক্ত হবে প্রয়োজনে।
৪. আরও প্রয়োজন হলে ৫% ভোট পাওয়া বিরোধী দলগুলোর একজন করে প্রতিনিধি যুক্ত হবে।
৫. কোনও পন্থায় একমত না হলে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী পুরনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা যাবে।
তবে জামায়াতে ইসলামী এ প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি তোলে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, রাষ্ট্রপতিকে একই সঙ্গে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ও অনুসন্ধান কমিটির প্রধান করা সাংবিধানিক দ্বন্দ্ব তৈরি করে।
বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ
আলোচনার শেষাংশে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ঘোষণা করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যেকোনো দল বিকল্প প্রস্তাব দিতে চাইলে সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে লিখিতভাবে তা জমা দিতে হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই দ্বিতীয় দফার আলোচনা পর্বে ২০টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে এখন পর্যন্ত আটটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, এমদাদুল হক, আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।