চলমান সংবাদ

এ কেমন বীভৎসতা?

-পুরান ঢাকার ব্যস্ত সড়কে দিনদুপুরে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদের নৃশংস হত্যা

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের খণ্ড দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)। শুধু তাই নয়, হত্যার আগে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়, তাঁর নিথর দেহের ওপর উঠে লাফিয়ে বেড়ায় কয়েকজন। এমন পৈশাচিকতার দৃশ্য ধরা পড়ে আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরায়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার (৯ জুলাই) স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে, পুরান ঢাকার ব্যস্ত সড়কে। নিহত লাল চাঁদ পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একসময় তিনি যুবদলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার নিহতের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম (৪২) রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫–২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান ওরফে মহিন ও তারেক রহমান ওরফে রবিন নামে দুইজন যুবদল কর্মী হিসেবে পরিচিত। তারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব আরও দুজনকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে, তবে তাঁদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত এবং এর পেছনে চাঁদাবাজিকে মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিহত লাল চাঁদ স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করায় এই নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, লাল চাঁদ রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন, আর কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর শরীরের ওপর কংক্রিটের খণ্ড নিক্ষেপ করছেন। এমন বীভৎস দৃশ্য সাধারণ মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।

এই পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন ইতোমধ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আজও বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক সংগঠন পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ঘটনার ভয়াবহতা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। দিনদুপুরে জনাকীর্ণ এলাকায় এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড কেবল নিরাপত্তাহীনতা নয় বরং একটি রাষ্ট্রে ন্যূনতম মানবিকতার অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বহন করে বলেই মত বিশ্লেষকদের।

সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে— এ কেমন বীভৎসতা? রাষ্ট্র কি ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে নাগরিকের জানমাল রক্ষায়?