চলমান সংবাদ

অস্ত্রের লাইসেন্স কীভাবে পেলেন আসিফ মাহমুদ? প্রশ্ন উঠছে নিয়ম ও শর্ত নিয়ে

দেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় কঠোর শর্ত ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। বয়স, আয়কর প্রদানের ধারাবাহিকতা, মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা—সবকিছু যাচাই করেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়া হয়।

তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর বয়স এখনো ৩০ হয়নি এবং তিনি কয়েক বছর আগেও শিক্ষার্থী ছিলেন—ফলে ধারাবাহিকভাবে তিন বছর আয়কর দেওয়ার শর্তও তিনি পূরণ করেননি বলে জানা গেছে।

গত রোববার (২৯ জুন) ভোরে মরক্কোগামী ফ্লাইট ধরতে গিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর ব্যাগে আগ্নেয়াস্ত্রের একটি ম্যাগাজিন পাওয়া গেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটে।

আসিফ মাহমুদ পরে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে জানান, তাঁর লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র রয়েছে এবং সেটি তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে বহন করেন। তিনি দাবি করেন, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাঁর ওপর একাধিকবার হত্যাচেষ্টা হয়েছে, যা অস্ত্র বহনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।

আইন যা বলে

‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬’-এর সাধারণ বিধান অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে—

  • বয়স হতে হবে ৩০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে,

  • আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য থাকতে হবে,

  • ধারাবাহিকভাবে গত তিন অর্থবছরে আয়করদাতা হতে হবে,

  • এবং ন্যূনতম ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে (অস্ত্রের ধরনভেদে)।

কিন্তু এ নীতিমালার ৩২ ধারায় কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কিছু শ্রেণির ব্যক্তির জন্য বয়স ও আয়কর প্রদানের শর্ত শিথিলযোগ্য। এদের মধ্যে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ প্রশাসক, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত।

এই ব্যতিক্রম ব্যবস্থার আওতায় যেহেতু আসিফ মাহমুদ বর্তমানে মন্ত্রী-সমপদমর্যাদার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাই তাঁর ক্ষেত্রে বয়স ও কর পরিশোধের বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য নয়।

লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া

অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে আবেদন জমা দিতে হয় জেলা প্রশাসকের কাছে। এরপর পুলিশি যাচাই-বাছাই, সাক্ষাৎকার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সুপারিশ এবং (পিস্তল বা রিভলবারের ক্ষেত্রে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে লাইসেন্স দেওয়া হয়। অস্ত্র কেনার পর পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অস্ত্র নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।

লাইসেন্সের শর্ত ও সীমাবদ্ধতা

বৈধ লাইসেন্সধারীরা প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ গুলি কিনতে পারেন। ব্যবহার সীমিত কেবল আত্মরক্ষা ও সরকার অনুমোদিত প্রশিক্ষণ রেঞ্জে টার্গেট প্র্যাকটিসে। আত্মরক্ষায় গুলি ব্যবহারের পর জিডি বাধ্যতামূলক।

লাইসেন্সধারী অস্ত্র অন্যের কাছে প্রদর্শন বা ব্যবহার করলে কিংবা নিরাপত্তার নামে অপপ্রয়োগ করলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।

প্রশ্ন থেকেই যায়

যদিও আইন অনুযায়ী আসিফ মাহমুদ লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য, তবুও প্রশ্ন থেকে যায়—এই লাইসেন্সের ব্যবহার কতটা ন্যায়সংগত? বিমানবন্দরে তাঁর ব্যাগে পাওয়া ম্যাগাজিনের ঘটনাটি কাকতালীয় না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা-ও অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

একই সঙ্গে লাইসেন্সপ্রাপ্তরা যেন অস্ত্র ব্যবহারে দায়িত্বশীল থাকেন এবং জনসুরক্ষা ও আইনের শাসন বিঘ্নিত না হয়—এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অস্ত্র শুধু লাইসেন্স নয়, এটি বিশ্বাস ও দায়িত্বের চুক্তি। সেই বিশ্বাস যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়—এই প্রত্যাশাই নাগরিকদের।