চলমান সংবাদ

মেয়র শাহাদাতের প্রথম বাজেট ঘোষণা: চসিকের ২১৪৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট, নগর উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মঙ্গলবার ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন। নগর উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত বাজেট অধিবেশনে মেয়র নিজেই বাজেট পেশ করেন।

মেয়র জানান, এই বাজেট তার মেয়াদের প্রথম এবং এটি নগরবাসীর আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম শহরকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেইফ সিটি হিসেবে গড়ে তোলা এবং আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি নান্দনিক, বাসযোগ্য ও পর্যটনবান্ধব নগরী গড়াই আমাদের লক্ষ্য।”

নিজস্ব আয়ে পৌরকর প্রধান ভরসা

চসিকের নিজস্ব উৎস থেকে ১ হাজার ৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার প্রায় অর্ধেক (৪৯.৭৫%) পৌরকর থেকেই আসবে। এই খাতে আয় নির্ধারিত হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ৪৭১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, কিন্তু আয় হয়েছিল মাত্র ৩২২ কোটি।

স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করসহ অন্যান্য কর খাত থেকে ১৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, রাস্তা খননসহ ১২ ধরনের ফি থেকে ১৩১ কোটি ৮০ লাখ, ভাড়া ও সম্পদ থেকে আয় ধরা হয়েছে ১০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্পভিত্তিক উন্নয়ন অনুদান খাতে ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকার আয় লক্ষ্য করা হয়েছে।

উন্নয়ন খাতে বড় বাজেট

নগর উন্নয়নের জন্য এডিপির ৯টি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৪৪ কোটি টাকা এবং রাজস্ব তহবিলের আওতায় ২৩টি খাতে বরাদ্দ ১৮১ কোটি টাকা, যা গতবারের তুলনায় বেড়েছে। আগের অর্থবছরে নগর উন্নয়নে মোট খরচ হয়েছিল ৫৮৬ কোটি টাকা।

পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে বড় ব্যয়

চসিকের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেতনভাতা ৩৩৯ কোটি ৩০ লাখ, বিদ্যুৎ ও পানি ৭০ কোটি, কল্যাণমূলক খাতে ৩৬ কোটি ৭০ লাখ এবং আতিথেয়তা ও উৎসব ব্যয় ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।

মশক নিধনে বরাদ্দ বৃদ্ধি

প্রস্তাবিত বাজেটে মশক নিধনে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯ কোটি টাকা করা হয়েছে, যার মধ্যে ওষুধ ক্রয়ে ৫ কোটি এবং মেশিন কেনায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত বছর এই খাতে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

মেয়রের বক্তব্য

বাজেট অধিবেশনে মেয়র বলেন, “নগরের রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, ফুটওভার ব্রিজ, সড়কবাতি ও জলাবদ্ধতা নিরসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।” জলাবদ্ধতা মোকাবেলায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য কুইক রেসপন্স টিম গঠন এবং সুপারভাইজার ও শ্রমিক নিযুক্ত করার কথাও জানান তিনি।

তিনি দাবি করেন, তার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ সম্ভব হয়েছে ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থান এবং আদালতের সুবিচারের মাধ্যমে। “ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্রে আমি বঞ্চিত হয়েছিলাম,” বলেন ডা. শাহাদাত।

তিনি জানান, দক্ষিণ পাহাড়তলীতে বর্জ্য শোধনাগার ও কুলগাঁওয়ে বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ চলছে, এবং শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।

বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন এবং উপস্থিত ছিলেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী।