চলমান সংবাদ

শপথ ছাড়াই ‘মেয়র’ ইশরাকের দাফতরিক তৎপরতা, সরকার নীরব

শপথ গ্রহণ না করেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে কার্যত দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন বিএনপিপন্থী নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। গেজেট প্রকাশিত হলেও সরকার এখনো তাঁর শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করেনি। এরই মধ্যে ওয়ার্ড সচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক ও মশক নিধন কর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন তিনি। এমন কার্যকলাপে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার নগর ভবনের নিচতলায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭০ জনের বেশি ওয়ার্ড সচিব এবং ১০টি প্রশাসনিক অঞ্চলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার ব্যানারে ইশরাককে “মাননীয় মেয়র” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সভায় প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নাগরিক সেবা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। এ কমিটির মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদসহ অন্যান্য সেবা চালিয়ে যেতে বলেন ইশরাক।

এর আগে সোমবার তিনি পরিচ্ছন্নতা বিভাগের প্রায় ৭০ জন পরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশনা দেন। আজ (বুধবার) তিনি মশক সুপারভাইজারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।

‘সরকার অচলাবস্থা টিকিয়ে রাখতে চায়’

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। এর আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকার দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন পরাজিত হন বলে ঘোষিত হলেও, চলতি বছরের ২৭ মার্চ এক নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে।

তবে এখনো তাঁর শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা হয়নি। এর মধ্যেই ইশরাকের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণে বিলম্ব করছে। গতকাল সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে সংকট সমাধানের বার্তা পেয়েছিলাম। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। সুরাহা না হলে আমরা রাজপথে আন্দোলনে নামব।”

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রচার করেছেন। তিনি বলেন, “উপদেষ্টা হিসেবে শপথ ভঙ্গ করেছেন তিনি। তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি। একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদকের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সোমবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, “নির্বাচন শেষ হলে নতুন করে নির্বাচন দিয়েই মেয়র পদ পূরণ করা যেতে পারে। শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই।”

নগর ভবনে এক মাসের বেশি অচলাবস্থা

ইশরাকের সমর্থকেরা গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই সময় থেকে নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিস করতে পারছেন না। কেবল মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে।

নগর পরিকল্পনাবিদদের উদ্বেগ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “শপথ না নিয়ে একজন ব্যক্তি নিজেকে মেয়র দাবি করে অফিস করছেন, এটি গণপ্রশাসনের জন্য ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। সরকারের নীরবতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা এই অচলাবস্থাকে দীর্ঘায়িত করছে। বিষয়টি আদালতের রায়ের আলোকে এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুসারে দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।”