নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন: তারেক রহমানের আহ্বান
ঢাকা, ১৭ মে – জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানের হোটেল লেকশোতে (ভার্চুয়ালি) অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করা সরকারের অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে, যা অযথা পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলছে। তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা না হলে পতিত পলাতক স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা সহজ হবে না এবং তাই বর্তমান সরকারের শীঘ্রই নির্বাচনের দিন-ক্ষণ ঘোষণা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করা উচিত উল্লেখ্য, শনিবার (১৭ মে) রাতে এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
তিনি আক্ষেপ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই তার কাজের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান উপেক্ষা করে এসেছে। বরং সরকার জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ‘অল্প সংস্কার–বেশি সংস্কার’ নামের অভিনব শর্তের ফাঁদে আটকে রেখেছে। ফলে জনগণ সরকারী কার্যক্রম সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সড়কে জড়ো হচ্ছে এবং মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে ও বাইরেও অস্থিতিশীলতার লক্ষণ স্পষ্ট দেখা দিচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, সরকার যদি জনগণের ভাষা, আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হয় তবে দেশজুড়ে অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে এবং এর ফলে বর্তমান সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠবে।
স্বাধীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সময়মতো নির্বাচন হওয়া জরুরি দাবি করে তারেক রহমান বলেন, আগামী দিনে আর কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ যেন দেশের ভোটবাণিজ্যকে ধ্বংস করতে না পারে সেজন্য গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়। যদিও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা নিয়ে জনমনে কিছুটা হতাশা আছে, তবুও গণতন্ত্রপন্থী দলগুলো ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ফলে আরওবার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দেশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি জোরালো আহ্বান জানান।
নির্বাচন ছাড়াও তার বক্তব্যের একাংশ উজ্জ্বল করে তুলে ধরল অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা ও বিব্রতকর সিদ্ধান্ত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডর’ প্রণয়ন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়; এই ধরনের সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সংসদের দায়িত্ব’। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের অগ্রাধিকার হয়েছে করিডর বা বন্দরের ব্যাপারে কাজ করা, অথচ জুলাই’গত আন্দোলনের শহীদ-আহত তালিকা চূড়ান্ত করাটুকু সম্ভব হয়নি। কেবল এ কারণে নয়, সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সরকার যেন দৃষ্টি সরে না যায় – এজন্যও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন নির্বাচিত কর্তৃপক্ষের বাইরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া চলবে না।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি এনবিআরের সংস্কার ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চলতি বাজেটে এনবিআর বিলুপ্তি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির ফলে রাজস্ব আদায়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, এনবিআর সংস্কার নিয়ে কারো মধ্যে দ্বিমত না থাকলেও এই সংস্কারের অগোছালো বাস্তবায়নের কারণে রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং চলতি বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। বিনিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। বিশাল আকারের বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করলেও কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি মেলেনি। এই সংকটে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিমূলক সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
বক্তব্য শেষে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশিত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ। এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, বিএনপি মহাসচিব মোমিনুল আমিন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, উচ্চ পরিষদ সদস্য পারভেজ খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান (ইরান), গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও দেশের বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বাংলাদেশ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় উপস্থাপন করা সংক্ষিপ্ত সংবাদের সারমর্ম