চলমান সংবাদ

সান্ডা এল কোথা থেকে, সান্ডা নিয়ে কেন এত আলোচনা

ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এখন নতুন এক ট্রেন্ডের নাম—সান্ডা। ‘কফিলের ছেলে’ ও ‘সান্ডা’—এই দুটি শব্দ ঘুরে বেড়াচ্ছে ইউজারদের হোমপেজ ও রিলসে। ‘কফিল’ বলতে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগকর্তাকে বোঝানো হয়। তাঁদের পরিবারের সদস্য, বিশেষত ছোট ছেলেকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা রসিকতা ও কৌতুক। এই ট্রেন্ডে উঠে এসেছে এক অদ্ভুত প্রাণী—সান্ডা। বলা হচ্ছে, কফিলের ছোট ছেলের নাকি প্রিয় খাবার সান্ডার বিরিয়ানি!

এই ট্রেন্ডের সূত্রপাত মূলত মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি ব্লগারের হাত ধরে, যাঁরা ফেসবুকে নিয়মিত রিল ভিডিও তৈরি করেন। তাঁদের মধ্য থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন হলেন আবদুল মান্নান, যিনি সৌদি আরবের দাম্মামে থাকেন এবং পেশায় পশুপালক। তাঁর ভিডিওতে নিয়মিতই দেখা যায় উট, ছাগল, গাধা এবং এক বিশেষ ধরনের কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা টিকটিকি—যেটিকেই বলা হচ্ছে সান্ডা

একটি ভাইরাল ভিডিওতে মান্নান সাহেব একটি সান্ডাকে দেখিয়ে বলছেন, “ও ভাইরে ভাই… সাপের মতো ফঁস ফঁস করে, দেখেন, ওয়াও, অসাধারণ!” মুহূর্তেই সান্ডাটি ফোঁস করে ওঠে। এ পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৬.৮ মিলিয়নের বেশি বা এবং তা ক্রমেই বাড়ছে।

তাহলে, এই ‘সান্ডা’ আসলে কী?

বিখ্যাত বিশ্বকোষ ব্রিটানিকার তথ্য অনুযায়ী, সান্ডা হল স্পাইনি টেইলড লিজার্ড, বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx। এটি Agamidae গোত্রের অন্তর্গত এবং এর একাধিক প্রজাতি রয়েছে। এই টিকটিকিরা সাধারণত উত্তর আফ্রিকা থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক অঞ্চলে বসবাস করে। সৌদি আরবের মরুভূমি হচ্ছে এদের অন্যতম আবাসস্থল।

স্থানীয় আরবি ভাষায় একে বলা হয় ‘দব’ (Dhub)। এরা মূলত দিনভর রোদ পোহায় এবং সন্ধ্যা হলেই গর্তে চলে যায়। বিপদের সময় পাথরের খাঁজে আশ্রয় নেয়। এদের খাদ্যতালিকায় থাকে গাছের পাতা, ফলমূল ও মাঝেমধ্যে ছোট পোকামাকড়।

কেমন দেখতে সান্ডা?

  • গিরগিটির মতো শরীর

  • চওড়া মাথা, মোটা শরীর, চারটি পা

  • লেজটি মোটা ও কাঁটায় ভরা

  • দৈর্ঘ্য গড়ে ২৫–৩০ সেন্টিমিটার (১০–১২ ইঞ্চি)

  • ঠান্ডায় গায়ের রঙ গাঢ়, গরমে হালকা—এইভাবে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে

বিপদের সময় এই প্রাণী গর্তে ঢুকে লেজটি বাইরে রেখে তীব্রভাবে দুলিয়ে আত্মরক্ষা করে। সব প্রজাতির সান্ডা ডিম পাড়ে এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এরা নিরামিষভোজী।

কেন এত আলোচনা?

মরুভূমির বেদুঈন ও স্থানীয় কিছু মানুষ এই প্রাণী ধরেন এবং খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। কেউ কেউ এর মাংস রান্না করে, এমনকি সান্ডার বিরিয়ানিও তৈরি করেন। প্রবাসী বাংলাদেশি ব্লগারদের ভিডিওতে এসব ঘটনা উঠে আসার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সান্ডা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। রসিকতা, কৌতুক, মিম—সবকিছুতেই এখন ‘সান্ডা’ ছড়িয়ে পড়েছে।

শেষ কথা, ‘সান্ডা’ নিয়ে আলোচনা কেবল একটি প্রাণীকে ঘিরেই ন বরং মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা, প্রবাসীদের জীবনযাপন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হালকা রসিকতার যুগপৎ প্রকাশ—এই মিশ্রণেরই নাম এখন সান্ডা ট্রেন্ড