বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১৯৯): লেনিনের জন্মদিন ও ফ্যাসিবাদী বিরোধী সম্মেলন

-বিজন সাহা

গত ২২ এপ্রিল ছিল লেনিনের ১৫৫ তম জন্মদিন। যদিও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর উপলক্ষ্যে রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি ফ্যাসিবাদ বিরোধী এক আন্তর্জাতিক ফোরামের আয়োজন করে তবে সেই সাথে বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টির ডেলিগেশনের উপস্থিতিতে লেনিনের ১৫৫ তম জন্ম দিবস পালন যে তারা করবে সেটাও স্বাভাবিক। এই উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে মস্কো এসেছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল। প্রিন্স ভাই অনেক আগেই আসার ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। আসার কয়েক দিন আগে যখন সময় দিতে পারব কি না জানতে চাইলেন, বললাম শনিবার সম্ভব। তাই উনি বাড়তি দুই দিন থেকে যান। সোহেল প্রোগ্রাম শেষে চলে গেলে দেখা হয়নি। সোভিয়েত আমলে দেশ থেকে কোন ডেলিগেশন এলে আমরা তাদের সাথে দেখা করতাম, তাদের মুখ থেকে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা শুনতাম। সেই সময়ে ইন্টারনেট ছিল না, তাই এসব সাক্ষাতের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখন ইন্টারনেটের যুগে অনেক খবর আমরা সাথে সাথেই পেয়ে যাই। তারপরেও, বিশেষ করে দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতায়, যারা জুলাই আগস্টের আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন, যারা ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় থেকেই বিভিন্ন প্রশ্নে আওয়ামী সরকারের বিরোধিতা করে এসেছেন, তাদের মুখ থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার এক ভিন্ন গুরুত্ব ছিল। পরে প্রিন্স ভাই বললেন শনিবার ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সেই উপলক্ষ্যে বন্ধুদের নিয়ে বসা সম্ভব কি না। বললাম চেষ্টা করব তবে কথা দিচ্ছি না, কারণ দীর্ঘদিন কারোও সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। তবে শেষ পর্যন্ত জনা বার লোক নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা হয়। এর আগে প্রায় সাত ঘণ্টা আমি প্রিন্স ভাইকে নিয়ে মস্কো সেন্টারে হেঁটে বেড়াই। মূল উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে খোলামেলা কথা বলা। জানতাম পার্টির নিয়মকানুনের কারণে বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিতে তার সীমাবদ্ধতা আছে, ফলে অনেক কথাই এড়িয়ে যাবেন। তারপরও আমাদের ফেস টু ফেস আলোচনায় তার যতটা খোলামেলা থাকার সুযোগ থাকবে বিকেলে আলোচনা সভায় সেটা থাকবে না। আমার প্রশ্ন, তার উত্তর এসব মিলিয়েই আজকের আলোচনা। স্বাভাবিক ভাবেই জুলাই আগস্টের আন্দোলন সম্পর্কে নিজেদের ভাবনা তাকে জানাই, জানতে চাই – কেন এমন হল যে গণ অভ্যুত্থানের ফসল তো বটেই, এমনকি একাত্তরের স্বাধীনতার ফসল আজ হাতছাড়া হয়ে যাবার পথে।

যেহেতু তারা যোগ দিয়েছিলেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী সম্মেলনে তাই এখান থেকেই শুরু হয় আমার জিজ্ঞাসা। আমার ধারণা ফ্যাসিবাদ শব্দটি অতি ব্যবহারে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। ট্রাম্পের মুখে বাইডেনকে বাম বা কমিউনিস্ট বলে গালি দেয়া শুনে আমি যেমন দ্বিধাগ্রস্ত হই তেমনি অবাক হই কমরেডরা যখন শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলে গালি দেয়। শেখ হাসিনা একনায়ক, স্বৈরাচারী এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু ফ্যাসিস্ট কি? এই প্রশ্ন আমার অনেক দিনের। কেননা প্রতিটি শব্দ নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। রাজনৈতিক শব্দের থাকে সংজ্ঞা। তাই আবেগের বশে যখন তখন যে সে শব্দ ব্যবহার করে রাজনীতিকেই হালকা করা হয়। তবে অনেকেই মনে করে সময়ের সাথে অনেক ধারণা পরিবর্তিত হয়, একই ভাবে পরিবর্তিত হয় ফ্যাসিজমের ধারণা। হতেই পারে। কিন্তু কোন ধারণার যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পরিবর্তিত হয় সেটা সমস্যা বাড়ায় বই কমায় না। কারণ যে কারণে শেখা হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলা হয় সেই কারণগুলো এখনও সমাজে বহাল তবিয়তে আছে আর নতুন শাসকরা মহা আনন্দে সেই সব অস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে ক্ষমতায় তাদের অবস্থান দৃঢ় করছে।

বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন দলের ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয় সেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল সেটা মেনেও নেয় না, মনেও নেয় না। ফলাফল? গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির অকাল মৃত্যু। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস থেকে ক্ষমতাচ্যুত হলে অস্তিত্ব সংকটের ভয়। এটা অনেকটা চেইন রিয়াকশনের মত। অথচ সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ থাকলে এই ভয় থাকত না, খেলাধুলার মত নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় যে দল জয়লাভ করত সেই দল সরকার গঠন করত আর হেরে গেলেও যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে না, কাজের মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসতে পারবে এই বিশ্বাস নিয়ে পরাজিত দল দেশের উন্নতির জন্য সরকারি দল সহ অন্যান্য দলের সাথে একযোগে কাজ করতে পারত। কিন্তু বিরোধী দল যেমন সরকারের সব রকমের উদ্যোগকে নানা অজুহাতে এড়িয়ে যায়, সরকারি দল সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে রাখতে। দিনের শেষে এটাই সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের বর্তমান সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ দীর্ঘদিনের রাজনীতিহীনতা। বাংলাদেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সত্যিকার অর্থেই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। এটা শুধু তাদের প্রায় একই রকম রাজনৈতিক চরিত্রের কারণেই নয়, মুদ্রার দুই পিঠ যেমন একে অন্যকে দেখতে পায় না, এই দুই দলও একে অন্যকে দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না বলেই মনে হয়। এমতাবস্থায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল তাদের মধ্যে ব্রোকারের কাজ করতে পারে। বিগত সময়ে এই কাজগুলো করে এসেছে জামাত ও হেফাজত। অথচ এই কাজ করার কথা ছিল কমিউনিস্ট পার্টি সহ বিভিন্ন বাম দলের। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিপিবি বা বাম শক্তির ক্ষমতায় আসা সুদূর পরাহুত। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু পারেই না, এটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। যাহোক, জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসলে জামাত শিবিরের রাজনীতিকেই প্রতিষ্ঠিত করে পার্টি ভুল করেছে কিনা জানতে চেয়ে বুঝলাম পার্টি নেতৃত্ব এখানে তাদের ভুল হয়েছে বলে মনে করে না। তারা যৌক্তিক ভাবেই বিশ্বাস করে যে শেখ হাসিনার পতন ছিল সময়ের ব্যাপার। তাই সরকার পতনের আন্দোলনে পার্টির ভূমিকা সঠিক ছিল বলেই তারা মনে করে। কিন্তু এই আন্দোলনে যে আম ছালা দুটোই তারা হারিয়ে ফেলল এ ব্যাপারে তারা অনুতপ্ত বলে মনে হল না। তাদের বিশ্বাস দেশ যেভাবে চলছিল তাতে সরকার পতনের বিকল্প ছিল না। একথা ঠিক যে আওয়ামী দুঃশাসনের শেষের দিকে দেশ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি রোগে শয্যাশায়ী ছিল। কথা ছিল দেশকে রোগমুক্ত করার। কিন্তু সব দেখে মনে হয় তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। যতদূর বুঝালাম এভাবে যে সরকার পড়বে সে ব্যাপারে তাদের বা অন্য কারও ধারণা ছিল না। যেন দেশের উপর জোর করে এই পরিস্থিতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পার্টি বার বার রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছে, সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের উপর জোর দিয়েছে। কিন্তু বলা আর সেটাকে বাস্তবায়ন করা এক নয়। সে হিসেবে দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার দায় পার্টি এড়াতে পারেন না। যে সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পার্টি আজীবন লড়াই করে গেল দিনের শেষে তাদের আন্দোলন যে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতই শক্তিশালী করল, সেটা যদি ভুল বলে স্বীকার না করা হয় তাহলে কি এই পরিস্থিতি থেকে বেরুনোর পথ পাওয়া যাবে? যদিও অনেক রাজনীতিবিদ বিগত জুলাই আগস্টের নেপথ্যে কারা ছিল এ ব্যাপারে অবগত না হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর এর ফলে দেশে যে অরাজকতা তৈরি হয়েছে সে জন্যে নিজেদের দায় স্বীকার করে সিপিবি সেটা করে বলে মনে হয় না। আসলে জীবনে সবচেয়ে কঠিন কাজ ভুল স্বীকার করা। ডাক্তার যত চেষ্টাই করুক না কেন রোগী যদি মারা যায় সেই দায় ডাক্তারকেই নিতে হয়। কোন দল যত ভালোই খেলুক না কেন হেরে গেলে ভালো খেলার মূল্য থাকে না। তাই যত দ্রুত তারা নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করবে তত দ্রুত সেটা শোধরানোর সম্ভাবনা থাকবে।

আমার মনে হয় যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে তারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। কারণ বর্তমানে একাত্তরের সমস্ত অর্জনকে অস্বীকার করে দেশ এখন ভিন্ন পথে চলছে। দেশকে যদি সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে একাত্তরের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই শক্তি আছে বাম দলগুলোয়, এই শক্তি আছে বিএনপির একটা অংশে। তবে এদের বৃহত্তর অংশ হয় আওয়ামী লীগের কর্মী অথবা সমর্থক। এরা মূলত আওয়ামী লীগের সেই অংশ যারা বিগত এক যুগ ধরে অবহেলিত। এদের সবাইকে এক করতে হলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাম জোট সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে যেমনটি তারা করেছিল এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। জানতে চাই এ ব্যাপারে কোন কাজ চলছে কিনা? যেহেতু আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, তাই তাদের সাথে সাংগঠনিক ভাবে কাজ করা এখন সম্ভব নয়। তাছাড়া এখনও তাদের কাছে আওয়ামী লীগ মানেই স্বৈরাচার। তাই কোন ফর্মাল জোটের সম্ভাবনা আপাতত নেই। সেটা না থাকলেও অন্তত কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ তো স্থাপন করা যায়। কিন্তু সব দেখে মনে হল এ নিয়ে বাম জোটের মধ্যে কোন বোঝাপড়া নেই। অবশ্য বাম জোট বলে কিছু আছে কিনা সেটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। এর আগে মতের অমিল ঘটলে বামপন্থী নেতারা নতুন পার্টি খুলে বসত। এখন সেরকম না হলেও একই পার্টির ভেতর অনেকগুলো মত প্রায় আলাদা আলাদা দলের মত কাজ করে বলেই আমার মনে হয়। সিপিবির নেতাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস সেটা নগ্ন ভাবে প্রকাশ করে। এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয় না, দিতে পারে না পার্টির শৃঙ্খলার কারণে, কিন্তু আমার তো আশংকা প্রকাশ করতে সসস্যা নেই!

আরও যে বিষয় আমাদের ভাবায় সেটা পার্টির বিভিন্ন গণ সংগঠনের সার্বিক পরিস্থিতি। যেকোনো সংগঠনের প্রাণশক্তি তরুণ প্রজন্ম। সিপিবির বিভিন্ন সহযোগী গণসংগঠন যেমন খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী, কৃষক সমিতি, খেতমজুর সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন আজ দ্বিধা বিভক্ত। বিশেষ করে খেলাঘর, উদীচী ও ছাত্র ইউনিয়ন। এটা শুধু ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নয়, মতের বিরোধও। অন্তত আমার তাই মনে হয়। হতে পারে পার্টি বা বিভিন্ন সংগঠনের উঁচু পদ আজকাল মানুষের সিভিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়, নিজের ব্র্যান্ডের বাজার মূল্য বাড়ায়। ফলে পদের প্রতি মোহ এখন আগের চেয়ে বেশি। এক সময় ছিল যখন এসব সংগঠনে কেউ দায়িত্ব নিতে চাইত না, যদিও কাজ করত প্রচুর। এখন পদের বাজার চড়া। পদ মানুষকে সেলেব্রিটি ভাবতে রসদ যোগায়। কে জানে? তবে এসব সংগঠনে যা চলছে তা দুঃখজনক। আমরা শুধু বলেই চলছি তরুণ প্রজন্ম আগের মত না, তারা এখন ভিন্ন অর্থে ম্যাটেরিয়ালিস্ট। কিন্তু খেলাঘর, উদীচী, ছাত্র ইউনিয়ন সব জায়গায় দলাদলি সৃষ্টি করে আপনি কি আশা করেন?

পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক মানুষ ধর্মের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। কিন্তু যারা ধার্মিক তাদের বেশিরভাগই এসব সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে না, প্রতিরোধ করার প্রশ্ন তো বহু দূর। একই ভাবে বিশ্বের প্রচুর মানুষ সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তবে খুব কম মানুষই কমিউনিস্ট পার্টি করে। এসব পার্টি যখন রাজনৈতিক লাভ লোকসানের হিসাব মেলাতে গিয়ে আদর্শ বিকৃত করে তখন আদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু পার্টি মেম্বার নয় এমন লোকেরা সাধারণত নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়। সেদিক থেকে এরা সাধারণ ধার্মিকদের মত আচরণ করে। মনে হয় সমাজ সচেতন লোক হিসেবে এদের উচিত যারা কমিউনিস্ট পার্টির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে কমিউনিস্ট আদর্শ বিরোধী কিছু করে এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। মনে রাখতে হবে যে এমনকি লড়াই না করলেও সমাজ পরিবর্তিত হায়। সময়ের সাথে সব বদলায়। সমাজও বদলায়। তাই লড়াই করতে হবে। কারণ তাতে নিজেদের মত সমাজ গড়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে কিন্তু সেটা যেন অন্ধবিশ্বাসে পরিণত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

সোভিয়েত আমলে সিপিবি সহ বিভিন্ন দেশের বামপন্থী নেতা কর্মীরা এদেশে আসত। শিক্ষা চিকিৎসা সহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত তারা। ‌বর্তমানে সরকারি ভাবে সেই সুযোগ নেই। তাছাড়া এরাও আর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির দেশ নয়। তবে বিগত এক যুগ ধরে অনেক কিছুই বদলাতে শুরু করেছে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ফিরে না গেলেও সামাজিক জীবনে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্জনগুলো স্বীকার করা হচ্ছে, অনেক সামাজিক সুযোগ সুবিধা জনজীবনে ফিরে আসছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রসঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিন অনেক আগে এক ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে যারা কষ্ট পায় না তারা হৃদয়হীন, তবে যারা আগের সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনর্গঠন করতে চায় তারা অল্প বুদ্ধির মানুষ। অর্থাৎ রাশিয়া সোভিয়েত অতীতে ফিরে যেতে চায় না, তবে সেই অতীতকে অস্বীকার করে না, যেমন অস্বীকার করে না সোভিয়েত ইউনিয়নের লিগেসি। তাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের মত রাশিয়াও গ্লোবাল সাউথ বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পাশে দাঁড়াচ্ছে, বিশ্ব রাজনীতিতে এসব দেশের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে। সেটা হয়তো করছে নিজেদের স্বার্থেই। কিন্তু স্বাধীন ও শক্তিশালী গ্লোবাল সাউথ শুধু রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করবে না, সবার আগে এসব দেশ নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবে পশ্চিমা আগ্রাসনের মুখে। আমার বিশ্বাস রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির আয়োজিত ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই সেমিনারে সরকারের অনুমোদন তো বটেই এমনকি অনুদানও ছিল। এসব বিবেচনায় সিপিবির নতুন করে রাশিয়ার মূল্যায়ণ করা দরকার। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন পাল্লা দিয়ে আমেরিকা, চীন, ভারত ইত্যাদি দেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় একই ভাবে সিপিবির উচিত রাশিয়ার সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক ঝালাই করে নেয়া। তা আর কিছু না হোক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সিপিবিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে অনেক ভুলভ্রান্তি এড়াতে সাহায্য করবে।

আজ ৯ মে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। আশা করব সিপিবি সহ বাংলাদেশের বাম দলগুলো সত্যিকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করবে, সাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করবে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো