চলমান সংবাদ

মেট্রোরেলের ছোট ত্রুটি সারাতে দেড় ঘণ্টা: অব্যবস্থাপনাই দায়ী

বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকা | ২৭এপ্রিল ২০২৫, শনিবার

ঢাকার মেট্রোরেল লাইন পরিচালনায় দুর্বল ব্যবস্থাপনার চিত্র ফের একবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গতকাল বিকেলে বিজয় সরণি সাবস্টেশনে একটি ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় এক ঘণ্টা ৪৯ মিনিট। অথচ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, এই সমস্যার সমাধান সম্ভব ছিল মাত্র ৫ মিনিটে—যদি কারিগরি কর্মী সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারতেন।

বিকেল ৫টা ৬ মিনিটে বিজয় সরণি সাবস্টেশন থেকে মেট্রোরেল লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে শেওড়াপাড়া ও শাহবাগ সাবস্টেশন থেকেও। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীরা একপ্রকার অন্ধকারেই ছিলেন—কোনো স্টেশনে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি, দেওয়া হয়নি সম্ভাব্য সময়ও।

ডিএমটিসিএলের ফেসবুক পেজে এ নিয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি, সর্বশেষ পোস্টটি ১৩ এপ্রিলের। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটেও ছিল না কোনো আপডেট। অথচ, প্রতিদিন চার লাখের বেশি যাত্রী পরিবহন করে এই মেট্রোরেল, এমনটাই প্রচার করে কর্তৃপক্ষ।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন দেখা যায়, কারিগরি কর্মীরা মূলত বসে আছেন উত্তরার দিয়াবাড়ী ডিপোতে। ফলে যানজট পেরিয়ে বিজয় সরণি পৌঁছাতে ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট লেগে যায়। তিনি পৌঁছানোর পর মাত্র ৫ মিনিটেই বিদ্যুৎ পুনরায় সংযোগ করা সম্ভব হয়।

মেট্রোরেলের অপারেশন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনেকেই ফোনে সাড়া দেননি। স্থায়ী জনসংযোগ কর্মকর্তা না থাকায় যাত্রীদের জন্য দ্রুত তথ্য দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও নেই। ফলে যাত্রীরা স্টেশনগুলোতে দিশেহারা অবস্থায় পড়েন। কেউ কেউ টিকিট ফেরত দিয়ে বেরিয়ে যান, কেউবা স্থায়ী কার্ড ব্যবহার করে প্রবেশের পর আটকে পড়েন প্ল্যাটফর্মে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র দিয়াবাড়ীতে কারিগরি টিম রাখার বদলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে যদি কর্মী মোতায়েন থাকত, তাহলে এ ধরনের দীর্ঘ সময়ের বিঘ্ন এড়ানো যেত।

ডিএমটিসিএলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এ ধরনের স্বল্প পরিসরের ত্রুটি হলে অন্য সাবস্টেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবার কথা। কিন্তু আজকের ত্রুটি ছিল এমন, যেখানে স্বয়ংক্রিয় বিকল্প চালু হয়নি, বরং নিরাপত্তার কারণে পাশের স্টেশনগুলোও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। কেন বিজয় সরণির বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ, তবে পরে তদন্ত করে জানা যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সমস্যা যতটা প্রযুক্তিগত, তার চেয়ে বেশি পরিচালনাগত দুর্বলতা ও দায়িত্বহীনতা এই অচলাবস্থার কারণ।