চলমান সংবাদ

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধির আশঙ্কা: অর্থনীতিবিদদের চোখে সংকট ও উত্তরণের উপায়

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে অর্থনীতিবিদরাও সমর্থন করেছেন এবং বলছেন, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক “নাজুক” অবস্থায় রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে পারে। এতে দেশের দারিদ্র্য হার বেড়ে ২২.৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যেখানে ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দারিদ্র্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি, চাকরি হারানো এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীর গতি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এদিকে শ্রমবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে—প্রথম ছয় মাসেই প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। সামান্য আয়ের ঘাটতিতেই তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। এক কথায়, টোকা দিলেই পড়ে যাবে।”

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের বয়ানে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি মানুষ দারিদ্র্যের কাছে অবস্থান করছে, যা সরকারি পরিসংখ্যানে উঠে আসে না।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ অবস্থার উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৩-৪ শতাংশের নিচে নামানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন মজুরি বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি।

ড. হোসেন বলেন, “এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এসব খাত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।”

তিনি আরও বলেন, “৬০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দিয়ে কিছুই হয় না। বরং এই প্রোগ্রামগুলোর আধুনিকায়ন ও দুর্নীতি দূর করে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।”

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, “নীতিগত সংস্কার জরুরি। স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, ব্যাংক খাত সংস্কার এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব নয়।”

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে দেশের অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে গতি ফিরতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন স্থিতিশীল ও সমন্বিত অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং কার্যকর সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো।

সারাংশ:

  • দারিদ্র্য হার ২২.৯ শতাংশে পৌঁছানোর আশঙ্কা

  • মূল্যস্ফীতি ও চাকরি হারানো প্রধান কারণ

  • বাজেটে সামাজিক খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান

  • স্থিতিশীল নীতিমালা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়া উত্তরণ সম্ভব নয়