বায়েজিদ স্টিলে শ্রমিক আহত হওয়ার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও সমাবেশ
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বায়েজিদ স্টিলে কর্মরত অবস্থায় রিফাত হোসেন তোফা এবং আরিফুল ইসলাম নামে দুইজন শ্রমিক মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে আজ সকাল ১১টায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরর সম্মুখ চত্বরে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বায়েজিদ-পাঁচলাইশ-চাঁন্দগাও-চকবাজার আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ হানিফের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মহিন উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধন ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রহিম, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রামের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল হালিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলানেতা মোঃ ইমান আলী, চান্দগাঁও থানা কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ মানিক মিয়া, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক নূর আলম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত ১০/০২/২০২৫ইং তারিখে রিফাত হোসেন তোফা এবং আরিফুল ইসলাম নামে দুইজন শ্রমিক মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তারা মারাত্মক ভাবে অগ্নিদগ্ধ হলেও তাদের কাউকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। শুধু তাদের দুইজনকে ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ফলে রিফাত হোসেনের অবস্থা এখন খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা এত খারাপ যে, ড্রেসিং করার সময় ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে বিগত ২৬/০২/২০২৫ইং তারিখে মেরিন সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রিফাত হোসেন তোফার পায়ের মাংস পুড়ে হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, হতভাগ্য শ্রমিক রিফাত পঙ্গু হয়ে যাবার শংকায় রয়েছে। অন্যদিকে আরিফুল ইসলামের মাথা ও মুখ পুড়ে গেছে। এখনো তাকে বাসায় রেখে ড্রেসিং করে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে তার চিকিৎসা বাবদ যে খরচ হয়েছে কর্তৃপক্ষ তাও প্রদান করেন নাই।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, স্টীল মিল একটি মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্র হওয়া সত্বেও এখানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোন নীতিমালা নাই। প্রায়শঃ নতুন এবং অনভিজ্ঞ শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং শ্রমিকদেরকে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছামত যত্রতত্র কাজে নিয়োজিত করা ইত্যাদি কারণে উক্ত দূর্ঘটনা ঘটেছে। সভা শেষে বায়েজিদ স্টিল মিলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আমরা বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বায়েজিদ-পাঁচলাইশ-চাঁন্দগাও-চকবাজার আঞ্চলিক কমিটির পক্ষ থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে নিম্নোক্ত দাবী জানানো হয়ঃ
১। আহত শ্রমিকেরা পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিতভাবে মজুরী প্রদান করতে হবে।
২। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ডাক্তারদের সমন্বয়ে বোর্ড বসিয়ে তাদের চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে ঢাকা বার্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করে উন্নতর চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
৩। ইতিপূর্বে অত্র কারখানায় দুর্ঘটনায় শ্রমিক আহত-নিহত হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে একটা পূর্নাঙ্গ তদন্ত করে অত্র প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের তালিকা তৈরী করতে হবে।
৪। শ্রম আইন ও বিধিমালা অনুসারে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। দৈনিক ১০ ঘন্টার বেশী কাজ করানোর যাবেনা। দৈনিক ৮ (আট) ঘন্টার ভিত্তিতে মাসিক মজুরি নির্ধারন করতে হবে এবং দৈনিক ৮ (আট) ঘন্টার অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম ভাতা দিতে হবে এবং মূল বেতনের সমপরিমান বৎসরে দুটি উৎসব বোনাস প্রদান করতে হবে। শ্রম আইন বর্ণিত সকল সবেতন ছুটি তথা নৈমিত্তিক, পীড়া, অর্জিত ও উৎসব ছুটি প্রদান করতে হবে।
৫। মালিকের প্রয়োজনে কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের মজুরী কর্তন করা যাবে না।
৬। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়মিত তদারকি করার জন্য শ্রম আইন ও বিধিমালা অনুসারে সেফটি কমিটি গঠন করতে হবে এবং যোগ্যতা সম্পন্ন সেফটি অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে একটা মেডিক্যাল কক্ষ স্থাপন করতে হবে।
৭) আহত দুই শ্রমিককে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে অবিলম্বে অনুদান পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
8) শ্রমিকের নিরাপত্তা বিধানে অযোগ্য মিল ম্যানেজারকে অবিলম্বে চাকুরিচ্যুত করতে হবে।