হাজেরা তজু কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ এস এম আইয়ুবের মৃত্যুর পর শোক ও ক্ষোভের ঝড়
শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনার পর মানসিক চাপের শিকার হন অধ্যাপক এস এম আইয়ুব, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু
চট্টগ্রাম নগরের হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ এবং রসায়নের অধ্যাপক এস এম আইয়ুব (৫৯) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ স্ট্রেচারে করে হাসপাতাল থেকে বের করে আনা হয়, এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যরা। এই দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে শোক ও আহাজারির পাশাপাশি অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জানান, এস এম আইয়ুবকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। সেই সময় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং পরবর্তী সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩৩ বছর ধরে কলেজে শিক্ষকতা করা এই অধ্যাপক তখন থেকে আর শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেননি।
কলেজের শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মতে, গত ২৩-২৪ সেপ্টেম্বর কলেজের শিক্ষার্থীরা বেতন কমানো, আইডি কার্ড প্রদানসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করেছিল। এ সময়ই এস এম আইয়ুবকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তার পর থেকেই তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুতে পরিণত হয়।
অধ্যাপক এস এম আইয়ুবের ভাগনে মোফাজ্জেল হাসান জানান, আজ সকালে তিনি অসুস্থ অনুভব করেন এবং তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছু সময় পরেই তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। মোফাজ্জেল হাসান বলেন, “স্যার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পদত্যাগের ঘটনা তাঁর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।”
হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ চয়ন দাশ জানিয়েছেন, এস এম আইয়ুবের কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ ছিল না এবং পদত্যাগের পর তিনি আর কোনো শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেননি। ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেন বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে, কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মো. শাহরিয়ার হাসান নামের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, “আমরা ছাত্র হিসেবে লজ্জিত, স্যারের এমন পরিণতি আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তিনি অপমান সহ্য করতে পারেননি।” অন্যদিকে সেলিম রানা নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “স্যার রসায়নকে অত্যন্ত সহজভাবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করতেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।”
অধ্যাপক এস এম আইয়ুবের তিন ছেলে রয়েছেন, যারা সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন।