বিপ্লবের ফসল, তাওহীদ হোসেনের কষ্টের যাতনা
পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান তাওহীদ হোসেন (৪০) এখন অবস্থা একেবারেই নাজুক। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ উদযাপনের মাঝে রাজপথে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে আজ তিনি সুস্থতার আশা ছাড়িয়ে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছেন। ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার কাছে পুলিশের গুলিতে তার পা গুরুতর জখম হয়। কিন্তু, সঠিক চিকিৎসার অভাবে এখন তার পা অকেজো হওয়ার পথে।
তাওহীদ জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, তবে সেখানে চিকিৎসা ছিল অপ্রতুল। প্রচুর আহত মানুষের ভিড়ে তিনি শুধু ব্যথানাশক পেয়ে ফিরে যান। তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে, তিনি সহ্য করতে না পেরে পঙ্গু হাসপাতালে যান। ঘটনার পাঁচ দিন পর তার পায়ের গুলি বের করা হলেও, এরপর আর কোনো উন্নত চিকিৎসা সেবা মেলেনি।
বর্তমানে তিনি কেবল প্যারাসিটামল খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন, তবে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। উত্তরার দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি, আর্থিক অভাবে স্ত্রী ও সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী-সন্তানদের জন্য তিনি কিছু করতে পারছেন না, এমনকি নিজের পায়ের চিকিৎসা করার জন্যও টাকা জোগাড় করতে পারছেন না।
তাওহীদ যে বিপ্লবের অংশ ছিলেন, তার পরিণতির হিসাব কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজে ঠিকমতো হয়নি। তার মতো অসংখ্য আহত মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদ পরিবারের সদস্যরা এখন উপেক্ষিত। “আমি রাষ্ট্রের জন্য রক্ত দিয়েছি, কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। একশত দিন হয়ে গেল, এখনও কেউ এসে আমার অবস্থা জানল না,” বলেন তাওহীদ। “শহিদ পরিবারের সদস্যদের ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি তো জীবিত থেকেও কিছুই পাচ্ছি না। আমার তো মনে হয়, হয়তো আমি মরে গেলে অন্তত পরিবারটা কিছু পেত,” এমন আক্ষেপে তিনি কাঁদেন।
এই দুঃখজনক কাহিনী শুধু তাওহীদের নয়, হাজার হাজার অন্য আহত মানুষেরও। সমাজ এবং রাষ্ট্র যদি তাদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারতো। কিন্তু অবশেষে তাওহীদের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রশ্নই উঠে, এই নতুন বাংলাদেশে তাদের জীবন-মানের মূল্য কোথায়?
এখানে একটা বড় প্রশ্ন জাগে – যে দেশের জন্য তাওহীদসহ হাজারো মানুষ নিজেদের জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছিল, সেই দেশে তাদের জন্য কোনো সহায়তা নেই, তাদের প্রতি মানবিক সহানুভূতিও ক্ষীণ। এমনকি, তাদের চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশবাসী এবং সরকারের প্রতি অনুরোধ, যেন তাওহীদের মতো বিপ্লবী যোদ্ধাদের ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা ও সহায়তা প্রদান করা হয়। যেন তারা জানেন, তাদের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ কোনোদিন বৃথা যায়নি।
# রাজধানী ঢাকা, ২০ নভেম্বর ২০২৪