চলমান সংবাদ

পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সরকারের তোড়জোড়, কিন্তু বাজারে চলছেই ব্যাপক ব্যবহার


বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার সরকারী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও, নভেম্বর মাসেও বাজারে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। ২০০২ সালে প্রথম পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ, তবে পরবর্তীতে তা কার্যকর করতে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার।

সম্প্রতি, অন্তর্বর্তী সরকার পলিথিন ব্যবহার বন্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অক্টোবর মাস থেকে সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, আর নভেম্বর থেকে বাজারেও পলিথিন বন্ধের কথা ছিল। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। যদিও সরকার পলিথিন বিরোধী অভিযান চালিয়েছে এবং কিছু পলিথিন জব্দও করা হয়েছে, কিন্তু বাজারের বড় অংশে পলিথিনের ব্যবহার এখনও বহাল রয়েছে।

বাধার মুখে অভিযান
পলিথিন নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে পুরান ঢাকায় ১৩ই নভেম্বর একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়, তবে ওই সময় শ্রমিক-মালিকদের প্রতিবাদে অভিযানটি কিছুটা স্থগিত করতে হয়। স্থানীয় পলিথিন কারখানার শ্রমিকরা বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানালে অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “আমরা চাই পলিথিন বন্ধ হোক, কিন্তু সেই সাথে মালিকদের দায়বদ্ধতা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন।”

বিকল্পের সংকট
পলিথিন নিষিদ্ধ করার পক্ষে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানালেও, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে তাঁরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বাজারে বিক্রি হওয়া পলিথিন ব্যাগের সহজলভ্যতা এবং সস্তা দামের কারণে তা ব্যবহার বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বনানী কাঁচাবাজারের এক মাংস ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, “পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না আসলে সেটা কঠিন।”

পলিথিনের পরিবেশগত ক্ষতি
এসডো (এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) এর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ঢাকা শহরে সাড়ে চার কোটি পলিথিন ব্যাগ বর্জ্য হিসেবে ফেলানো হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পলিথিন মাটির সাথে মিশে না গিয়ে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা খাদ্য ও পানিতে মিশে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, এসব রাসায়নিক থেকে মেদ, হাঁপানি, হৃদরোগসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, যার খরচও সরকারকে বহন করতে হয়।

দূষণমুক্ত ভবিষ্যত: বিকল্প পরিকল্পনা
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, “চাহিদা তৈরি হলে বিকল্প ব্যবস্থা বাজারে আসবে। সরকারের তরফে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি প্রচারণা চালানো হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার মূল হলো বিকল্প পণ্যের সহজলভ্যতা।” তবে পাটজাত ব্যাগের মত বিকল্প কিছু উদ্যোগ বাজারে আসলেও সেগুলোর ব্যাপক ব্যবহার এখনও হয়নি।

সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ
পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, তবে সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে যাবে। যদি বিকল্প ব্যবস্থার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া না হয়, তাহলে পলিথিন নিষিদ্ধ করাও কঠিন হয়ে পড়বে, এমনটি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পলিথিনের ব্যবহার এবং তার পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি, রিসাইক্লিং বা পুনঃব্যবহারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।

# নভেম্বর ১৭, ২০২৪