চলমান সংবাদ

নতুন সরকারের প্রতি আস্থাশীলতা বা হতাশা?

১০০ দিনের ফলাফল এবং ভবিষ্যতের প্রশ্ন

-ফজলুল কবির মিন্টু

ফজলুল কবির মিন্টু (ফাইল ছবি)

গত ১০০ দিনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার চলছে। সরকারের কাজের গতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের অদক্ষতা এবং জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে, আমার একটি ফেসবুক পোস্টে দুটি মূল মন্তব্য বিশেষভাবে সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশার একটা স্পষ্ট ছবি তুলে ধরছে।

প্রথম মন্তব্যকারী, সংস্কার কমিশনের কাজ সম্পন্ন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণের পরেই তার সফলতার সুযোগ দেখা যাবে বলে মনে করেন। কিন্তু তার আশঙ্কা, অতিশীঘ্র সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতারা এবং বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজের কিছু অংশ সরকারের প্রতি হতাশা প্রকাশ করছে, যা দীর্ঘমেয়াদে পুরনো স্বৈরাচারের পুনরুত্থান ঘটাতে পারে।

দ্বিতীয় মন্তব্যকারী অবশ্য সরকারের প্রতি দৃঢ় আস্থাশীলতা প্রকাশ করেছেন। তবে, তিনি মনে করেন যে, অতীতের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে, বর্তমান সরকারের উপর এত দ্রুত ও ব্যাপক সমালোচনা করার মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তার মতে, এই সরকারের অধীনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহসী ও ভবিষ্যতদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।

তাদের মন্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করছে এবং সরকারকে সফল হওয়ার জন্য সময় দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেও গত ১০০ দিনে তার কোনও দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়নি—এমনটাই আমার ধারণা।

এইব্যাপারে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে- একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে সরকারের কার্যক্রম শুরুর প্রথম কিছু দিন চ্যালেঞ্জে ভরা থাকে। বিশেষ করে একটি রক্তক্ষয়ী অভুত্থানের পর, সরকারের কাছে জনগণের উচ্চ প্রত্যাশা থাকে। একথা সত্য, ৫৩ বছরের জমে থাকা সংকট মাত্র এক শতাধিক দিনে সমাধান হওয়ার কথা নয়, তবে পরিবর্তনের প্রথম সাড়া দিতে না পারলে জনগণ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

গত ১০০ দিনে, সরকার জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগ উঠে এসেছে। বিশেষত প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, চেইন অব কমান্ডের ভাঙন এবং মেরামতের কোনও উদ্যোগের অভাব সরকারের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা গণঅভ্যত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা ও পুণর্বাসন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারে নি। এই মন্ত্রণালয়ের যিনি উপদেষ্টা হিসাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি কোন যোগ্যতায় এই দায়িত্ব পেয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অথচ, কিছু অংশের জনগণ এখনও আশা করেন যে সরকার তার ব্যর্থতাগুলোর পরিপূরক হিসেবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রণয়ন করবে এবং রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। এবং দেশকে সাফল্যের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিবে। তবে আমার শংকা হচ্ছে, সরকার শেষ পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে তো?

এখনও সময় বাকি আছে, তবে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। জনসাধারণ, বিশেষত শিক্ষিত শ্রেণী ও রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত এবং দৃঢ় পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছে। রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি সরকারের কার্যক্রমের ব্যাপারে জনগণের এই বিশাল প্রত্যাশা পূরণ করা না গেলে সরকারের প্রতি আস্থা সংকুচিত হতে পারে।

শেষ পর্যন্ত, সবার মনে একটি গভীর প্রশ্ন রয়ে গেছে: সরকার কি তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পথে চলতে পারবে, নাকি অতীতের মতো একটি পরিবর্তনহীন পরিস্থিতিতে আটকে পড়বে?