৫২ এবং ৭১: আমাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় -ফজলুল কবির মিন্টু

সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫২ এবং ৭১ দুটি অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়, যা কেবল আমাদের জাতীয় পরিচয় গঠন করেনি, বরং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করেছে। এই দুটি ঘটনা আমাদের জাতির জীবনে যে গুরুত্ব বহন করে, তা অস্বীকার করা অসম্ভব। যারা ইতিহাসের এই অংশগুলিকে বদলানোর চেষ্টা করছে, তারা হয়তো সাময়িকভাবে সফল হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসের দীর্ঘমেয়াদী সত্য কখনো মুছে ফেলা যায় না।
ভাষা আন্দোলন: ৫২-এর প্রেক্ষাপট
১৯৫২ সালে যখন পাকিস্তানি সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে, তখন বাংলাভাষীরা তাদের ভাষার অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করে। এটি কেবল একটি ভাষা আন্দোলন ছিল না, বরং একটি জাতীয় আন্দোলনের সূচনা। এই সংগ্রাম বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং জনগণের মধ্যে এক নতুন জাতীয় চেতনা জাগিয়ে তোলে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের প্রতি সংহতি গড়ে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধ: ৭১-এর চূড়ান্ত ধাপ
১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের জাতির এক বিশাল প্রতিরোধের প্রতীক। ভাষা আন্দোলনের চেতনা মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণা যুগিয়েছিল, যা আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ রচনা করে। ৫২-এর সংগ্রামের ফলস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতীয়তাবোধ আরো দৃঢ় হয়। এই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, যা আমাদের ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়।
ইতিহাসের শিক্ষা
যারা ৫২ এবং ৭১-এর গুরুত্ব অস্বীকার করতে চান, তারা ইতিহাসের একটি অমূল্য অংশকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন। ইতিহাসের শিক্ষা হল, যেকোনো জাতির জন্য সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের গুরুত্ব। আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের নিজেদের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
আমাদের দায়িত্ব
বাংলাদেশের ইতিহাসের এই দুই অধ্যায়ের গুরুত্ব অস্বীকার করা মানে আমাদের নিজেদের পরিচয়কে অস্বীকার করা। আমাদের উচিত এই ইতিহাসকে সঠিকভাবে বোঝা এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এর যথাযথ প্রচার করা। ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদের শিকড়কে ভুলে না যায়।
উপসংহার
৫২ এবং ৭১ আমাদের ইতিহাসের দুই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা আমাদের জাতীয় আত্মবোধের ভিত্তি গড়ে তুলেছে। এগুলোর গুরুত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আমাদের ঐতিহাসিক শিক্ষা থেকে সচেতন হতে হবে এবং আমাদের সংগ্রামকে সম্মান জানাতে হবে। এই চেতনাকে ধারণ করেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হবে, যাতে আমরা ইতিহাসের এই মূল্যবান পাঠ কখনো ভুলে না যাই।