un

চট্টগ্রামে একদিনের নোটিশে নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ চাকুরিচ্যূত

মধ্য রাতে নিজ মালামালসহ হোটেল পেনিন্সুলায় ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ ডলি আক্তার

পরপর দুই বছর অন্তসত্ত্বা হওয়ায় ‘চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অফ নার্সিং’ এর অধ্যক্ষ ডলি আকতারকে একদিনের নোটিশে চাকরীচ্যুত করেছে চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস কর্তৃপক্ষ। ওইদিন মধ্যরাতে হোস্টেল থেকে বের করে তাকে আট মাস বয়সের শিশুসহ নগরীর একটি হোটেলে রেখে আসা হয়। ডলি আকতার আড়াই মাসের অন্তসত্ত্বা বলে জানা গেছে। বুধবার চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অব নার্সিং এর ওই অধ্যক্ষকে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই এক দিনের নোটিশে চাকরীচ্যুত করা হয়।

অধ্যক্ষ ডলি আক্তার গত বছর অন্তসত্ত্বা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন। চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস এর প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. দিল আনজিজ এর নিকট অসুস্থতার কারণে দেখা করতে গেলে তিনি পরীক্ষা করে, অধ্যক্ষ ডলি আক্তার পুনরায় অন্তসত্ত্বা হয়েছেন জানান। এই অবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে নানাভাবে হেনস্থা করতে থাকে এবং মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ বলতে থাকে “আপনি গত বছরও চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন এবং এই বছরও আবার ছুটি নেবেন তাই আপনি পদত্যাগ পত্র দিয়ে বিদায় নিয়ে নিন।

অধ্যক্ষ ডলি আক্তার পদত্যাগ না করায়, গত বুধবার সকালে কর্তৃপক্ষ তাকে মানব সম্পদ বিভাগে ডেকে নিয়ে যায় ও তৎক্ষণাৎ পদত্যাগ পত্র দিতে বলে অন্যথায় তাকে টার্মিনেট করা হবে বলে জানান। এরপর যখন অধ্যক্ষ ডলি আক্তার পদত্যাগ করবেনা বলেন তখন তাকে একটি ফটোকপি চাকরীচ্যুতির নোটিশ দেয় ও তৎক্ষণাৎ কলেজ সংক্রান্ত সকল কগজপত্র কলেজ সেক্রেটারির নিকট বুঝিয়ে দিয়ে কলেজ হোস্টেল ছেড়ে দেয়ার জন্য বলে।

অধ্যক্ষ ডলি আক্তার চাকরীর শুরু থেকেই বিগত প্রায় ৩ বছর কলেজ হোস্টেলে অবস্থান করছিলেন, এমনকি বিগত বছর মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়ও তিনি হোস্টেলে অবস্থান করে কলেজের কাজে সহযোগীতা করেছিলেন।

তার পরিবার ঢাকায় অবস্থান করে বিধায় তিনি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন হোস্টেল ত্যাগের জন্য যেন তাকে কয়েকদিন সময় দেয়া হয়। এতে তার স্বামী এসে তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত অমানবিকভাবে তাকে ওইদিনই মধ্যরাতে আট মাস বয়সের বাচ্চাসহ ও বর্তমানে আড়াই মাসের অন্তসত্ত্বা অবস্থায় কলেজের হোস্টেল থেকে বের করে নগরীর হোটেল পেনিনসুলায় রেখে আসে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (সিএমিউ) অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অব নার্সিং। সিএমইউ এর বিধি অনুযায়ী সিএমইউ এর উপাচার্যসহ প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অফ নার্সিং এর অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষেই অধ্যক্ষ নিয়োগ ও চাকরীচ্যুত করা যায়, অন্যথায় তা বৈধ হবেনা। এ প্রসংগে গত বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি থাকায় সিএমইউ তে অভিযোগ পত্র জমা দিতে না পারায় অধ্যক্ষ ডলি আক্তার টেলিফোনে সিএমইউ এর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ওমোর ফারুক ইউসুফ এর নিকট অভিযোগ উত্থাপন করলে তিনি এ প্রসংগে অফিস খোলার দিন সিএমইউ তে চিঠি দিতে বলেছেন। সেই মোতাবেক গতকাল সিএমইউ এর বর্তমান উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন।

চাকরীচ্যুতি ও তৎক্ষণাৎ দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া ও মধ্যরাতে হোস্টেল থেকে তার মালামাল ও দুগ্ধ পোষ্য শিশুসহ বের করে নিয়ে নগরীর পেনিনসুলা হোটেলে রেখে আসা অযৌক্তিক, অমানবিক, অবৈধ, বেআইনি বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।  এমন অমানবিক আচরণের উপযুক্ত তদন্ত করে বিচার দাবি করেন এবং অবৈধ চাকরীচ্যুতির নোটিশ প্রত্যাহার করার দাবী জানান তারা