নির্বাচন বিষয়ে সেনাপ্রধানের মন্তব্য নিয়ে দলগুলোর ভাবনা
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সবধরনের সমর্থন দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি৷
তার এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলো এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ তবে জামায়াতে ইসলামী বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের জন্য ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগার কথা৷
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান রাষ্ট্র পরিচালনা ও নির্বাচন ব্যবস্থায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে তাতে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানান৷
তিনি বলেন, সংস্কারের পর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়া উচিত৷ ‘‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আমি বলব যে এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত,” বলে মন্তব্য করেছেন সেনাপ্রধান৷
সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার একটি পথের রূপরেখাও তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে তার প্রতি সপ্তাহে দেখা হয় এবং তাদের মধ্যে ‘খুব ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে বলেও জানান সেনাপ্রধান৷ ‘‘আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই,” বলেন তিনি৷
বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া
সেনাপ্রধানের এইসব মন্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘‘আমার বিবেচনায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য কোনোভাবেই ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়৷ আমি মনে করি সেনাপ্রধান নির্বাচনের জন্য ১৮ মাস বা দেড় বছর সময়ের কথা বলেননি৷ তিনি নির্বাচন ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ওই সময়ের কথা বলে
তার কথা, ‘‘কিছু কিছু সংস্কার আছে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার৷ আবার সংবিধান পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে৷ এখন দরকার একটি নির্বাচিত গ্রহণযোগ্য সরকার৷ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়েছে তা নির্বাচিত সরকারই করতে পারে৷ তাই আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন৷”
তবে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘‘সেনাপ্রধান নির্বাচনের জন্য যে ১৮ মাস সময়ের কথা বলেছেন সেটা নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷ তিনি তার অবস্থান থেকে বলেছেন৷ কিন্তু আমরা বলছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে৷ তবে আমরা কোনো টাইম ফ্রেম বেঁধে দিচ্ছি না৷ তবে যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্বাচন চাই৷”
তিনি বলেন, ‘‘সংস্কার নিয়ে নানা মহলের, দলের নানা মত আছে৷ সেটা সবার সঙ্গে আলোচনা করলে একটি জায়গায় আসা যাবে৷ অন্তর্বর্তী সরকার সেটা করতে পারে৷”
সরকার এরই মধ্যে প্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগসহ ছয়টি খাতে সংস্কারের ব্যাপারে ছয়টি কমিটি করেছে৷ তারা তিন মাসের মথ্যে প্রতিবেদন দেবেন৷ এই কমিটিগুলোর কাজ হলো সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ করা৷
তবে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি মনে করেন, ‘‘৪৫ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের যে অগ্রগতি তা সন্তোষজনক নয়৷ তাদের আরো দ্রুত কাজ করা উচিত৷ এখন পর্যন্ত তারা নির্বাচন ও সংস্কারের কোনো রোডম্যাপ প্রকাশ করেনি৷ এই রোডম্যাপ প্রকাশ করা জরুরি৷”
তিনি বলেন, ‘‘সেনাপ্রধান ১৮ মাসের কথা বললেও আমার মনে হয় এক বছর বা ১২ মাসের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন সম্ভব৷ আর সংস্কার করতে হলে রাজনৈতিক দলসহ সবার সঙ্গে এখনই আলাপ আলোচনা শুরু করা দরকার৷”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘সেনাপ্রধান যা বলেছেন তা এই সরকারের প্রতি সমর্থনের কথাই বলেছেন৷ এই সরকার একটি গণঅভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে গঠিত হয়েছে৷ এটা সবার সরকার৷ সেই সরকারের প্রতি সেনবাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন৷ এরমাধ্যমে যৌক্তিক সময়ে সংস্কার ও নির্বাচন সম্ভব হবে৷”
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘‘আমি সেনাপ্রধানের যে বক্তব্য শুনেছি তাতে স্পষ্ট যে তিনি নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলেছেন৷ সেই সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য তিনি ১৮ মাস সময়ের কথা বলেছেন৷ তিনি আসলে নির্বাচন নিয়েই ভাবছেন৷ কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের যে কথা হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি৷ আর সেই সংস্কারের জন্য ১৮ মাস পর্যাপ্ত সময় কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন৷”
তার মতে, ‘‘ওই নির্বাচনের জন্য পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য কাজে সেনা প্রধান ড. ইউনূসকে সবধরনের সমর্থন দেয়ার কথা বলেছেন বলেই আমার মনে হয়েছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘আরেকটি কথা হলো সেনাপ্রধানের যে কথা, সেটা অন্তর্বর্তী সরকারেরও অবস্থান কিনা৷ তা কিন্তু এখনো বলা যাচ্ছে না৷ আমরা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া পেলে সেটা বুঝতে পারব৷ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের কয়েক দিন আগেও বৈঠক হয়েছে৷ সেই বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা তাও আমরা জানি না৷ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন থেকে ফেরার পর হয়তো আমরা জানতে ও বুঝতে পারব৷”