চলমান সংবাদ

সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত এস এন কর্পোরেশন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে গত ৭ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া মারাত্মক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১২ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।  ফোরামের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল  থেকে এই পর্যন্ত ১৩০ জন শ্রমিক কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এবারের দুর্ঘটনার ভয়াবহতা পূর্ববর্তী সকল দুর্ঘটনার মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
এই গুরুতর দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সঠিক তদন্ত ও দায়ী পক্ষগুলির শাস্তি নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। এই লক্ষ্যে একটি নিরপেক্ষ, বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত, যাতে জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের প্রতিনিধিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া, দুর্ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন করে দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ ইয়ার্ড ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য একটি কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করা অপরিহার্য।
জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকরা বর্তমানে অত্যন্ত অনিরাপদ কর্মপরিবেশে কাজ করছেন এবং তারা পর্যাপ্ত মজুরি ও সুবিধা পাচ্ছেন না। ২০১৮ সালে ঘোষিত নিম্নতম মজুরি এখনো কার্যকর হয়নি এবং শ্রম আইনের বিভিন্ন অধিকার, যেমন সবেতন ছুটি, চিকিৎসা সুবিধা, দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের বিধান, প্রতি ঘন্টা অন্তর ১৫ মিনিটের বিরতি ইত্যাদি পালিত হচ্ছে না।
উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে আজ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে উপ মহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরীর মাধ্যমে মহাপরিদর্শক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম। স্মারকলিপি গ্রহণকালে উপ মহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরী আশ্বস্ত করেন যে, তিনি স্মারকলিপিটি মহাপরিদর্শকের নিকট পৌঁছে দিবেন। তিনি ফোরামের সকল দাবির সাথে একমত পোষণ করেন এবং দাবি বাস্তবায়নে তার দপ্তরের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানান। এই সময় ফোরামের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল উদ্দিন, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক মছিউদ্দৌলা, জাতীয় শ্রমিক লীগ ফৌজদারহাট-বারবকুণ্ড-সীতাকুণ্ড শিল্প জোনের সভাপতি মাহাবুবুল আলম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরি, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার, জাহাজভাঙা শ্রমিক সেফটি কমিটির আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মাহমুদ, সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী, যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ ইদ্রিস, ফোরামের সদস্য সচিব ফজলুল কবির মিন্টু এবং অন্যান্য শ্রমিকনেতা।

স্মারকলিপিতে ফোরামের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়:
১. দুর্ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন করে একটি কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং দায়ী মালিকপক্ষ, কনসালটেন্ট ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. গঠিত সকল তদন্ত কমিটিতে জাহাজভাঙা ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৪. আহত শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রম আইন অনুযায়ী সবেতন ছুটি ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৫. নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে এবং তাদের মধ্যে অন্তত সক্ষম একজনকে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের বাইরে মালিকের অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদান করতে হবে।
৬. সকল শ্রমিককে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান করতে হবে।
৭. শ্রম আইন অনুযায়ী সকল সবেতন ছুটি প্রদান করতে হবে।
৮. অবাস্তায়িত ২০১৮ সালের ঘোষিত মজুরি বোর্ডের সুপারিশ কার্যকর করে বকেয়া পরিশোধ ও নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার নির্ধারণ করতে হবে।
৯. স্থায়ী পদে শ্রমিকদের নিয়োগে ঠিকাদারী ব্যবস্থার পরিবর্তে সরাসরি মালিকের অধীনে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১০. আইএলও কনভেনশন ১ এবং শ্রম আইনের ধারা ১০০ অনুযায়ী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস নির্ধারণ, প্রতি ঘণ্টায় ১৫ মিনিট বিশ্রামের বিধান এবং আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও দর কষাকষির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
১১. দুর্ঘটনার কারণে এস এন কর্পোরেশন বন্ধ থাকা অবস্থায় শ্রম আইনের ১২(৭) ধারা অনুসারে সকল শ্রমিককে পূর্ণ মজুরি দিতে হবে