মতামত

অগ্নি দুর্ঘটনায় ইয়ার্ড বন্ধ হলে কি শ্রমিক বেকার হবে?

-ফজলুল কবির মিন্টু

ফজলুল কবির মিন্টু
সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি

সম্প্রতি এস এন কর্পোরেশন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে,  শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ইয়ার্ডটি বর্তমানে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের পরিবেশগত সনদ স্থগিত করেছে। এ অবস্থায় কিছু মানুষ উদ্বিগ্ন যে, ইয়ার্ড বন্ধ থাকলে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের বেকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তারা দ্রুত ইয়ার্ডটি খুলে দেয়ার আবেদন জানিয়েছে। তবে এই অবস্থায় শ্রম আইনের প্রাসঙ্গিক বিধি কী বলছে এবং প্রকৃত পরিস্থিতি কি?

শ্রম আইনের প্রাসঙ্গিক বিধি:

শ্রম আইন, ২০০৬-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী, যদি অগ্নিকাণ্ড, আকস্মিক বিপত্তি, যন্ত্রপাতি বিকল, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, মহামারী, ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা অথবা মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত অন্য কোন কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মত পরিস্থিতি হয়, তবে মালিক প্রতিষ্ঠানের কোন শাখা বা শাখাসমূহ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পারেন। এস এন কর্পোরেশ্ন গ্রিন শিপ ব্রেকিং মালিক নিজে বন্ধ না করলেও বন্ধ করার মত পরিস্থিতি হওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আদেশক্রমে বন্ধ রয়েছে।

তবে, এই বন্ধের পর শ্রমিকদের মজুরি বিষয়ক বিধানগুলিও উল্লেখযোগ্য। শ্রম আইনের ধারা ১২-এর উপধারা ৫ অনুযায়ী, যদি শ্রমিকদের কর্মস্থলে অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয় এবং অবস্থানের সময়কাল ১ ঘণ্টার কম হয়, তবে তারা মজুরি নাও পেতে পারেন। কিন্তু, অবস্থানের সময়কাল ১ ঘণ্টার বেশি হলে তারা সম্পূর্ণ মজুরি পাবেন।

উপধারা ৬ অনুসারে, বন্ধের মেয়াদ যদি ১ কর্ম দিবসের চেয়ে বেশি না হয়, তাহলে শ্রমিকদের কোন মজুরি নাও পেতে পারেন। কিন্তু উপধারা ৭ অনুযায়ী, যদি বন্ধের মেয়াদ ১ কর্ম দিবসের বেশি হয়, তবে সাময়িক বা বদলি শ্রমিক ব্যতীত প্রত্যেক শ্রমিককে ১ দিনের অতিরিক্ত সকল বন্ধ কর্ম দিবসের জন্য মজুরি প্রদান করতে হবে।

বাস্তবতা:

এটি স্পষ্ট যে, শ্রম আইনের ধারা ১২ অনুসারে, এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মজুরি সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। যদি বন্ধের মেয়াদ ১ কর্ম দিবসের বেশি হয়, তবে শ্রমিকদের তাদের মজুরি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ কারণে, এস এন কর্পোরেশন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ থাকলেও, শ্রমিকদের বেকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বরং তারা মজুরি পাবেন।

সংক্ষেপে,

কিছু মানুষের মন্তব্য অনুযায়ী, শ্রমিকদের দ্রুত ইয়ার্ড খুলে দেয়ার আবেদন যে কারণে উঠেছে তা মূলত শ্রমিকদের মজুরি হারানোর সম্ভাবনার উদ্বেগ। তবে, শ্রম আইন অনুযায়ী, সাময়িক বন্ধের সময় শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত বিধান স্পষ্ট এবং শ্রমিকদের মজুরি পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত। তাই, এস এন কর্পোরেশন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের বন্ধের পরিস্থিতি অনুযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং মজুরি নিয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই।

যদি কেউ শ্রম আইনের সঠিক তথ্য না জেনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন, তবে তাদের উদ্দেশ্য এবং মনোভাব প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে আইনের সঠিক প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই প্রেক্ষিতে শ্রম আইন সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তবে এই ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ভূমিকা আরো জোরালো ও স্পষ্ট হতে হবে অন্যথায় শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

(লেখকঃ বিলস-ডিটিডিএ প্রকল্পের অধীনে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক এবং টিইউসি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক)