মতামত

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই: বাংলাদেশ কি পিছিয়ে যাচ্ছে?

-ফজলুল কবির মিন্টু

ফজলুল কবির মিন্টু
সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো বেনজীর এবং তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সন্ধান এবং পরবর্তীতে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বাজেটে  সরকারের কালো টাকা সাদা করার নতুন নীতি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেনজীরের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, ৩টি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সন্ধান পাওয়ার পর আদালত এই সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেন। এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর ১৫% কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে বাজেট পেশ করা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রশ্ন হলো, ১৫% কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগে বেনজীর তার সমস্ত অবৈধ সম্পদ সাদা করার সুযোগ পাবেন কি? অনেকে অভিযোগ করেছেন যে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি থেকে পিছু হটেছে। বেনজীর ইতিমধ্যে দুদকের কাছে হাজির হওয়ার জন্য ১৫ দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন এবং দুদক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। এতে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী।

আইনি প্রক্রিয়ায় ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা

বেনজীর যদি ১৫% কর দিয়ে তার অবৈধ সম্পদ সাদা করার সুযোগ পান, তাহলে এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করবে। এই অবস্থায় আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জরুরি। আদালতের নির্দেশ এবং দুদকের কার্যক্রম যেন কোনোভাবে প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান

সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগের ফলে যদি দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করা হয়, তবে এই নীতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারকে দায়বদ্ধ রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধু সমালোচনা নয়, বাস্তবসম্মত এবং কার্যকরী সমাধান প্রস্তাব করতে হবে। নাগরিক সমাজেরও সোচ্চার হওয়া উচিত। গণমাধ্যম, এনজিও এবং সাধারণ জনগণের মতামত এবং সমর্থন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

করনীয়:

  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব কার্যক্রম স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে।
  • আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মস্থলে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত।
  • সরকার ও বিরোধী দলের যৌথ উদ্যোগ: দুর্নীতি দমন করতে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। একসাথে কাজ করলে দুর্নীতি রোধ করা সহজ হবে।

বাংলাদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা শুধুমাত্র সরকারের নয়, বরং পুরো সমাজের সহযোগিতায় সফল হতে পারে। আইন ও নীতি বাস্তবায়নে দৃঢ়তা প্রদর্শন করে এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে আমরা একটি স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারি।

(লেখকঃ সংগঠক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটি)