বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা করেছিলে

১৯৮১ সালের ৩০শে মে ভোরে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

৪৩ বছর আগের সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনও নানান প্রশ্ন উঠতে দেখা যায়, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

 জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে, যার মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যেই নাটকীয়ভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে পরবর্তী সাতদিন সবচেয়ে ঘটনাবহুল এবং তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বলে মনে করেন অনেকে।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক ওই এক সপ্তাহে ঠিক কী কী ঘটনা ঘটেছিলো।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পরদিন বেশিরভাগ পত্রিকাতেই সেটি প্রধান শিরোনাম হয়েছিল
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পরদিন বেশিরভাগ পত্রিকাতেই সেটি প্রধান শিরোনাম হয়েছিল

রেডিওতে মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা

ঘটনার আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৮১ সালের ২৯শে মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দুই দিনের সফরে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন।

তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজের প্রতিষ্ঠা করা রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যকার বিরোধ নিরসন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমদিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক শেষে মধ্যরাতে ঘুমাতে যান জিয়া।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেনাবাহিনীর একটি দল তার উপর গুলি চালায় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

ঘটনার পর ৩০শে মে সকালে রেডিওতে প্রথমবারের মতো জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়।

তখনকার পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে যে, অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে সকাল সাতটায় সংবাদ সম্প্রচার শুরু হয়। কিন্তু মাত্র তিন মিনিট চলার পর হঠাৎ-ই সংবাদ পাঠ বন্ধ হয়ে যায়।

এর কিছুক্ষণ পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তৎকালীন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার খবর প্রচার করা হয়।

এই খবর প্রচারের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তারা জিয়ার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু জানতেন না বলেও তৎকালীন পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামের এই সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়
চট্টগ্রামের এই সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাগ্রহণ

রেডিওতে ঘোষণা দেওয়ার পর জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর খবর দ্রুতই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এক বিবৃতিতে তৎকালীন সরকার জানায় যে, ‘বিপ্লবী পরিষদ’ পরিচয় দেওয়া কিছু সেনা সদস্য রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন সাত্তার।

বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান-সহ সবাই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন বলে তখনকার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

এরপর ৩০শে মে দুপুরে রেডিও এবং টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন সাত্তার।

তার সেই ভাষণের একটি অনুলিপি পরের দিন বাংলাদেশের বেশিরভাগ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

“আমি গভীর বেদনা ও দুঃখ ভরে জানাচ্ছি যে, আমাদের প্রিয় নেতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আজ (৩০শে মে, শুক্রবার) সকালে চট্টগ্রামে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন,” ভাষণের শুরুতেই বলেন সাত্তার।

জিয়ার মৃ্ত্যুর পর তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ক্ষমতা গ্রহণ করেন
 জিয়ার মৃ্ত্যুর পর তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ক্ষমতা গ্রহণ করেন

এর পরের লাইনেই তিনি বলেন, “আমি সংবিধানের ৫৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হয়েছি।”

দেশে তখনকার পরিস্থিতিকে ‘দুর্যোগময়’ উল্লেখ করে ধৈর্য্য ও সংহতি বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান সাত্তার।

একই সঙ্গে, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করারও আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যেন তারা আগের মতোই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন।

নিজের ভাষণে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট এটাও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যদেশের যত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে, সেগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই কার্যকর থাকবে।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে ৪০ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করার মাধ্যমে সাত্তার তার ভাষণ শেষ করেন।

আত্ম-সমপর্ণের পর মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে
আত্মসমপর্ণের পর মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে

জরুরি অবস্থা জারি

ক্ষমতা গ্রহণের পর ৩০শে মে থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়।

সেখানে বলা হয় যে, রাষ্ট্রপতিকে হত্যার ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা হুমকীর মুখে পড়েছে বলে মনে করে সরকার।

ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের কোথাও সভাসমাবেশ, গণ-জমায়েত ও মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়।

তবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে সংবিধান বা সংসদ বাতিল হবে না বলে বিবৃতিতে জানায় সরকার।

সঙ্গে এটাও জানানো হয় যে, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ামাত্রই জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের এই কক্ষেই ছিলেন জিউর রহমান
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের এই কক্ষেই ছিলেন জিয়াউর রহমান

গোপনে মরদেহ দাফন

হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা পরেই জিয়াউর রহমানের মরদেহ গোপনে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানেই একটি পাহাড়ের পাদদেশে জিয়াউর রহমানকে কবর দেওয়া হয় বলে তখনকার একাধিক পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ১৯৮১ সালের দোসরা জুনে দৈনিক সংবাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ৩০শে মে সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে সেনাবাহিনীর একটি দল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আসে।

তারা নিহত রাষ্ট্রপতি মি. রহমানসহ অন্তত তিনজনের মৃতদেহ গাড়িতে তুলে ‘অজ্ঞাত’ স্থানে নিয়ে যায়।

ঘটনার পর ৩০শে মে সকালে সার্কিট হাউজে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর রেজাউল করিম রেজা।

কয়েক বছর আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জনাব রেজা বলেন যে, তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সার্কিট হাউজে পাঠানো হয়েছিল সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা সৈন্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেবার জন্য।

“কর্নেল মতিউর রহমান আমাকে ডাকেন। ডেকে বলেন যে জিয়াউর রহমান ডেডবডিটা কিছু ট্রুপস সাথে নিয়ে সার্কিট হাউজ থেকে নিয়ে পাহাড়ের ভেতরে কোথাও কবর দেবার জন্য।”

“আমি তখন তাকে বললাম যে আমাকে অন্য কাজ দেন। তারপর উনি মেজর শওকত আলীকে ডেকে ওই দায়িত্ব দিলেন,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মেজর রেজা।

বেশ কয়েকজন সেনা সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে মেজর শওকত আলীই এরপর জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে দাফন করেন বলে জানান তিনি।

জিয়াউর রহমানের সঙ্গে একই কবরে কর্নেল এহসান এবং ক্যাপ্টেন হাফিজের মৃতদেহও কবর সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধারের পর জিয়াউর রহমানের মরদেহ ঢাকায় আনা হয়
চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধারের পর জিয়াউর রহমানের মরদেহ ঢাকায় আনা হয়

চট্টগ্রামে যুদ্ধের পরিবেশ

তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেজর রেজাউল করিম রেজা বিবিসি বাংলাকে জানান যে, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে সেনানিবাসে ফিরে তিনি রীতিমত যুদ্ধের পরিবেশ দেখতে পান।

মেজর রেজার মতো যেসব সেনা কর্মকর্তা হয়তো ছুটিতে ছিলেন নতুবা অন্য কোন কাজে ছিলেন, তাদের ডেকে এনে বিভিন্ন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

মেজর রেজার কাঁধে নতুন চাপে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব।

চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তখনকার জিওসি মি. মঞ্জুর ৩০শে মে সারাদিন কর্মকর্তা ও সৈন্যদের বিভিন্ন ব্যারাকে ঘুরে-ঘুরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বলে জানান মেজর রেজা।

একপর্যায়ে তার কাছে ঢাকা সেনানিবাস থেকে একটি টেলিফোন আসে।

টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো যে জেনারেল এরশাদ মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সাথে কথা বলতে চান।

কিন্তু জেনারেল এরশাদের সাথে কথা বলার বিষয়ে মোটেই আগ্রহী ছিলেন না জেনারেল মঞ্জুর।

মেজর রেজার কাছে মনে হয়েছিল যে, মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে জেনারেল এরশাদ হয়তো ক্ষমতায় যেতে যাচ্ছেন।

কিন্তু জেনারেল মঞ্জুর হয়তো জেনারেল এরশাদকে মেনে নিতে চাননি।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃ্ত্যুতে অনেক দেশ শোকবার্তা দিয়েছিল
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃ্ত্যুতে অনেক দেশ শোকবার্তা পাঠিয়েছিল

সান্ধ্য আইনে বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রাম

জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভ্যুত্থানকারীরা। জারি করা হয় সান্ধ্য আইন।

৩০শে মে থেকে পরবর্তী দু’দিন রাস্তায় রাস্তায় অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা সেনা সদস্যদের টহলও দেখা গেছে বলে তখনকার পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে।

খবরে আরও বলা হয়েছে, ওইদিন সকাল নয়টার পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।

অন্যদিকে, অভ্যুত্থানকারীরা অবস্থান নেওয়ায় সড়ক ও আকাশপথেও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চট্টগ্রাম পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৩ জন সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি হয়েছিল
জিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৩ জন সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি হয়েছিল

মরদেহ হস্তান্তরের আহ্বান

হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানার পর সেদিনই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ ঢাকায় আনার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে জানায় তৎকালীন সরকার।

কিন্তু সরাসরি যোগাযোগ করতে না পেরে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির মরদেহ ঢাকায় পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয় বলে সাংবাদিকদের জানান তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান।

কিন্তু চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন বলে পরে এক বিবৃতিতে জানায় সরকার।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো)
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো)
 

আত্মসমর্পণের নির্দেশ

চট্টগ্রামের অভ্যুত্থানকারী সেনারা জিয়াউর রহমানের মরদেহ হস্তান্তর না করায় সরকার ক্ষিপ্ত হয়।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ গ্রহণের নির্দেশ দেন অস্থায়ী রাস্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মঞ্জুর-সহ ‘অভ্যুত্থানে’ অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সবাইকে ৩১শে মে দুপুর ১২টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন তৎকালীন সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করলে ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তিন বাহিনীর প্রধান-সহ সবাই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন
তিন বাহিনীর প্রধান-সহ সবাই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন

অভ্যুত্থানকারীদের দাবি উত্থাপন

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর অভ্যুত্থানকারীরা নিজেদেরকে বিপ্লবী পরিষদের সদস্য বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন।

গবেষক আনোয়ার কবির বিবিসি বাংলাকে জানান, জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ৩০শে মে জেনারেল মঞ্জুর চট্টগ্রাম বেতার থেকে কয়েকবার ভাষণ দিয়েছিলেন।

সেই ভাষণে জেনারেল মঞ্জুর জেনারেল এরশাদকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত এবং মেজর জেনারেল মীর শওকত আলীকে সেনাপ্রধান হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এছাড়া বিপ্লবী পরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়ে জেনারেল মঞ্জুর সেনা বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন বলেও গবেষক আনোয়ার কবির উল্লেখ করেন।

তিনি মনে করেন, জেনারেল মঞ্জুর হয়তো ভেবেছিলেন তাদের সমর্থনে ঢাকা সেনানিবাসে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে সাড়া দিতে পারে। কিন্তু সেটি হয়নি।

জিয়া নিহত হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যেই নাটকীয়ভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন এইচ এম এরশাদ
জিয়া নিহত হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যেই নাটকীয়ভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন এইচ এম এরশাদ

অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে বিভক্তি

জিয়াউর রহমানকে হত্যার দিন অর্থাৎ ৩০শে মে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি ছিল সেটি তার পরের দিন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।

জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় বিএনপি’র বর্তমানে প্রয়াত নেতা হান্নান শাহ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদায় চট্টগ্রাম মিলিটারি একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন।

২০১৬ সালে মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হান্নান শাহ বলেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতিকে হত্যার পরের দু’দিন অভ্যুত্থানকারী সেনারা চট্টগ্রাম শহরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন।

কিন্তু ৩১শে মে তারিখে এসে অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সৈনিক এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেল।

অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষ ত্যাগ করে অনেকেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে শুরু করেন।

এসব খবর পেয়ে মেজর জেনারেল মঞ্জুর বিচলিত হয়ে পড়েন বলে বিবিসি বাংলাকে বলেন হান্নান শাহ।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে দেশে ৪০ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছিল
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে দেশে ৪০ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছিল

মঞ্জুরের পলায়ন

৩১শে মে রাতে মেজর জেনারেল মঞ্জুর এবং কর্নেল মতিউর রহমান-সহ অভ্যুত্থানকারী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যান।

সেই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হান্নান শাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “৩১শে মে রাত ১১টার দিকে জেনারেল মঞ্জুরের বাসা থেকে হঠাৎ একটি ফোন এলো।”

“তিনি আমাকে এবং আরো কয়েকজন কর্মকর্তাকে বসিয়ে রেখে ওনার অফিস থেকে বাসায় গেলেন। কিন্তু ঘণ্টা-খানেক পরেও তিনি ফিরে এলেন না।”

“এমন অবস্থায় অন্য অফিসারদের তাদের কর্মস্থলে পাঠিয়ে দিয়ে আমি আমার কর্মস্থল মিলিটারি একাডেমিতে ফিরে আসলাম।”

“ইতোমধ্যে আমি জানতে পারলাম, জেনারেল মঞ্জুর তাঁর পরিবার নিয়ে এবং অন্যান্য বিদ্রোহী অফিসাররা পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. শাহ।

এরশাদ
জিয়া হত্যার পরে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশ তৎপর হয়ে ওঠেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা

মেজর জেনারেল মঞ্জুরের পালানোর খবর ছড়িয়ে পাড়ার পর অভ্যুত্থানের পক্ষের সেনাদের মনোবল আরও ভেঙে পড়ে।

ঘটনা আরও নাটকীয় মোড় নেয় পহেলা জুন। সেদিন জানা যায় যে, অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহবুব চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সরকার সমর্থিত সেনা সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

এ অবস্থার মধ্যেই মঞ্জুরকে ধরার জন্য পাঁচ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

তখনকার পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে যে, কেউ যদি পলাতক মঞ্জুরকে জীবিত অথবা মৃত ধরে দিতে পারেন, সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কার হিসেবে তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে।

মেজর জেনারেল মঞ্জুর পালিয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম সেনানিবাস পুনরায় সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

১৯৮১ সালের ৩০শে মে'র অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সেনা ও পুলিশের আরও অনেক সদস্য মারা যান
১৯৮১ সালের ৩০শে মে’র অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সেনা ও পুলিশের আরও অনেক সদস্য মারা যান

জিয়ার কবরের সন্ধান

নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ১৯৮১ সালের পহেলা জুন জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ খুঁজতে বের হয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ।

তার সাথে ছিলেন কয়েকজন সিপাহী, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি স্ট্রেচার।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হান্নান শাহ জানিয়েছিলেন যে, জিয়াউর রহমানের মরদেহ খুঁজে বের করার জন্য তারা কাপ্তাই রাস্তার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছিলেন এবং অনুমানের উপর ভিত্তি করে নতুন কবরের সন্ধান করছিলেন।

তখন একজন গ্রামবাসী এসে তাদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কী খোঁজ করছেন?

ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ গ্রামবাসীকে জিজ্ঞেস করেন, সেনাবাহিনীর সৈন্যরা সেখানে কোন ব্যক্তিকে সম্প্রতি দাফন করেছে কি না?

তখন সে গ্রামবাসী একটি ছোট পাহাড় দেখিয়ে জানালেন কয়েকদিন আগে সৈন্যরা সেখানে একজনকে কবর দিয়েছে।

তবে সে গ্রামবাসী জানতেন না যে কাকে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে।

গ্রামবাসীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হান্নান শাহ সৈন্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখেন নতুন মাটিতে চাপা দেয়া একটি কবর।

সেখানে মাটি খুঁড়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং আরো দুই সেনা কর্মকর্তার মৃতদেহ দেখতে পান তারা।

তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ তুলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনা হয়।

সেখান থেকে পরে হেলিকপ্টারে করে জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ ঢাকায় আনা হয়।

এরপর ঢাকায় জানাজা শেষে সংসদভবনের সামনে অবস্থিত ক্রিসেন্ট লেকের উত্তরপাশে মি. রহমানকে পুনরায় দাফন করা হয়।

জিয়াউর রহমানের জানাজায় কয়েক লাখো মানুষ অংশ নিয়েছিল তখনকার জাতীয় দৈনিকগুলোর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনার দু'দিনের মধ্যেই অভ্যুত্থানকারীদের দমন করা হয়েছিল
ঘটনার দু’দিনের মধ্যেই অভ্যুত্থানকারীদের দমন করা হয়েছিল

আত্মসমর্পণের পর মঞ্জুরের মৃত্যু

মেজর জেনারেল মঞ্জুর এবং কর্নেল মতিউর রহমান যে গাড়ির বহরে পালিয়েছিলেন, সেই বহরে মেজর রেজাউল করিম রেজাও ছিলেন।

তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, কিছুদূর অগ্রসর হয়ে একটি পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছানোর পর সামনে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান তারা।

তখন তারা এটাও লক্ষ্য করেন যে, সামনে কিছু সৈন্য পাহাড়ের দিকে ছোটছুটি করছে।

সে সময় মি. মঞ্জুর গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু গাড়িটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ায় সেটি করা সম্ভব হয় না।

তখন তারা অন্য আরেকটি গাড়িতে করে পেছনের দিকে চলে আসেন। সেখানে একটি গ্রামে তারা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন।

এলাকাটিতে চা বাগান ছিল। জেনারেল মঞ্জুর তখন চা বাগানের এক কুলির বাড়িতে আশ্রয় নেন।

সেখানেই আত্মসমর্পণ করলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তাকে আটক করে থানায় আনেন।

এরপর তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেওয়া হয়।

জিয়া
বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যকার বিরোধ নিরসনে চট্টগ্রাম গিয়ে নিহত হন জিয়াউর রহমান

সেখানেই মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যার শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

যদিও সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে তখনকার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে যে, সেনানিবাসে নেওয়ার সময় একদল সশস্ত্র ব্যক্তি মঞ্জুরকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য সেনা সদস্যদের উপর হামলা করে।

তখন দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে মঞ্জুর আহত হন এবং পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

সে সময় ‘বিদ্রোহের’ অভিযোগে ১৮ জন সামরিক কর্মকর্তার বিচার করা হয়েছিল।

এদের মধ্য ১৩ জন সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।

যে সামরিক আদালতে কথিত অভ্যুত্থানকারীদের বিচার করা হয়েছিল, তাতে অভিযুক্তদের পক্ষে আইনি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছিলেন তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল ইব্রাহীম দাবি করেছেন যে, তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ওই সেনা আদালতকে যথাযথভাবে কাজ করতে দেয়নি।

ফলে অভিযুক্তরা ন্যায়বিচার পাননি।

জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়
জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়

সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা

সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় সেনাবাহিনীতে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের সেনানিবাসের সৈন্যদের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

সে সময় রুহুল আলম চৌধুরী ছিলেন সেনাবাহিনীর লেফটেনান্ট কর্নেল। তাকে পাঠানো হয়েছিল চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সৈনিকদের মধ্যে তখন চরম বিশৃঙ্খলা এবং অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছিল।

জনাব চৌধুরী বলেন, “সোলজাররা মেরে ফেলবে এটা তো কেউ বিশ্বাসই করতে পারেনি। এ ও-কে সন্দেহ করে, ও এ-কে সন্দেহ করে। সবার মধ্যে অবিশ্বাস। পুরো আর্মি চবজতো এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলো না, কিছু সংখ্যক লোক ছিলো।”

“কমান্ড না থাকলে যা হয়, সেই চরম বিশৃঙ্খলা ছিলো তখন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন জনাব চৌধুরী।

এ অবস্থায় বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সেনানিবাসগুলোতে গিয়ে সেনাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রভাব বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি এরশাদকে সাহায্য করেছিল বলে মনের অনেকে।

একইসঙ্গে, অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংযোগ থাকার সন্দেহে তখন বেশ কয়েকজন সেনাকর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়, যাদের মধ্যে  এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও ছিল বলে জানা যায়।

যেমন: অভ্যত্থানের পর বিপ্লবী পরিষদ থেকে তৎকালীন মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী নামের যে সেনা কর্মকর্তাকে সেনাপ্রধান বানানোর দাবি জানানো হয়েছিল, তাকেও কিছুদিনের মধ্যে অবসর দিয়ে বিদেশে রাষ্ট্রদূত করার সুপারিশ করা হয়।

# তারেকুজ্জামান শিমুল, বিবিসি নিউজ বাংলা, ঢাকা