২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছে পিটার হাস
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাঁদের (সরকারের) এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই। সরকার মনে করে, বিএনপি যে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে করে যাবে। শান্তিপূর্ণভাবে যদি করে, তাহলে কিছুই বলার নেই।
আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পিটার হাস। বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে পিটার হাসের জিজ্ঞাসার বিষয়বস্তু এবং তাঁর নিজের বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পূজা নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। তাঁকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সহিংসতা পছন্দ করেন না। শান্তিপ্রিয় মানুষ। কাজেই পূজায় কিছু হবে না বলেই তাঁরা (মন্ত্রী) বিশ্বাস করেন এবং আশা করছেন। সবাই যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায় আছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরপর কথা হয়েছে ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে বিরাট কর্মসূচি (মহাসমাবেশ) দিয়েছে, সেখানে অনেক লোক নিয়ে আসবে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না কিংবা অন্য কিছু করা হবে কি না।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমাদের ওই ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা মনে করি, তারা (বিএনপি) যে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে করে যাবে। শান্তিপূর্ণভাবে যদি করে, তাহলে কিছু বলার নেই। তারপরও আমরা অনুরোধ করব, ঢাকা শহর এমনিতেই একটি যানজটপূর্ণ শহর। এখানে দুই কোটির বেশি মানুষ বসবাস করেন, ঢাকার রাস্তাঘাট মানুষে পূর্ণ থাকে। সেখানে যদি ১০ লাখ লোক ঢুকে বা আরও বেশি যদি ঢোকে, যেটা তারা (বিএনপি) বলেছে, তাহলে তো একটি মিস ম্যাচ (গোলমেলে পরিস্থিতি) হয়ে যাবে, কমিউনিকেশন, এটা, সেটা। সেগুলো যাতে তারা না করে, সেটার জন্য অনুরোধ করব।’
সরকার লোকজনের আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেবে কি না, সেটাও পিটার হাস জানতে চেয়েছিলেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে আলাপচারিতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, আসা-যাওয়া বন্ধ কেন করব? ঢাকায় তো সবারই প্রয়োজন, রোগীর ঢাকা আসা প্রয়োজন, বিদেশে যেতে হলে ঢাকায় আসা প্রয়োজন—সব কিছু তো ঢাকাকেন্দ্রিক। কাজেই আসা-যাওয়া বন্ধ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।’
সমাবেশ উপলক্ষে তাঁরা (বিএনপির নেতা-কর্মী) আসবেন, তাঁরা যাবে, সেখানে সরকার কোনো বাধা দেবে না এবং বাধা দেওয়ার কোনো চিন্তাও করছে না বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকুই বলব, তারা যেন কোনো সহিংসতায় লিপ্ত না হয়, তারা যেন রাস্তাঘাট বন্ধ না করে, চলাচলের জায়গা যেন তারা সচল রাখে। এটুকুই আমাদের অনুরোধ, সেটা তাঁকেও (রাষ্ট্রদূত) জানিয়ে দিয়েছি।’
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। অপর দিকে বিএনপির এ মহাসমাবেশ মোকাবিলায় ‘সর্বোচ্চ’ গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকদের অনেকে তাঁদের সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে এই মহাসমাবেশকে বিএনপির ‘মরণকামড়ের’ শুরু হিসেবে দেখছেন। এ জন্য বিএনপির এই সমাবেশে চাপ প্রয়োগ করে জমায়েত ছোট করা, এমনকি হতে না দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।