চলমান সংবাদ

তিন দিনে ইটালি পৌঁছালো বাংলাদেশিসহ হাজারখানেক অভিবাসন প্রত্যাশী

ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপ পৌঁছাতে গিয়ে শত শত অভিবাসীকে মেনে নিয়ে হয় মৃত্যুর শীতল স্পর্শ৷ ছবি: এমএসএফ/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স

ভূমধ্যসাগরের বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে শুক্রবার থেকে রোববারের মধ্যে ইটালি পৌঁছেছেন বাংলাদেশিসহ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ শনিবার ও রোববার টিউনিশিয়ার উপকূল ছেড়ে আসা অনেকগুলো সমুদ্র অনুপযোগী নৌকা এসে পৌঁছেছে ইটালির তিনটি ছোট্ট দ্বীপে। এছাড়াও, এই দুই দিনে অন্তত ১৫টি উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত একটি উদ্ধারকারী জাহাজ।

এদিকে, সিসিলির পশ্চিম উপকূলে ডুবে যাওয়া একটি নৌকার ধ্বংসাবশেষ থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করেছে ইটালির উপকূলরক্ষীরা।

শুক্রবার থেকে শুরু করে রোববার ভোর পর্যন্ত লাম্পেদুসা দ্বীপে আসা ৬০টি নৌকা থেকে অন্তত ৪০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ দ্বীপের একমাত্র আশ্রয়শিবিরটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৪৫০ বলে জানিয়েছেন, এটির পরিচালনায় থাকা ইটালিয়ান রেড ক্রসের প্রতিনিধি পিয়েরেলুইগি দে আসেন্তিস৷ তিনি জানান, আশ্রয়শিবিরটিতে এখন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি।

জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, লাম্পেদুসা থেকে ফেরিতে করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সিসিলি নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে ইটালি সরকার।

রোববার ইটালির ত্রাপানি বন্দরের কর্মকর্তা গুলগিয়েলমো ক্যাসোনেকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, শনিবার মারেত্তিমো দ্বীপের উপকূলে ডুবে যাওয়া একটি নৌকার ধ্বংসাবশেষ থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ ওই ঘটনায় নয় অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে উপকূলরক্ষীরা৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আরো বলা হয়েছে, ওই নৌকাডুবিতে একজন নিখোঁজ হয়েছেন৷ তার সন্ধানে উপকূলরক্ষীদের একটি হেলিকপ্টার অনুসন্ধান করছে।

ইটালির দৈনিক কোরিয়ের দেলা সেরা জানিয়েছে, অবকাশের জন্য নির্ধারিত পানত্তেলেরিয়া দ্বীপে কোনো উদ্ধার অভিযান ছাড়াই ২৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছেছেন।

শুক্রবার দুটি পৃথক অভিযানে ভূমধ্যসাগর থেকে ১০৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে এসওএস হিউম্যানিটির উদ্ধারকারী জাহাজ৷ ছবি: রাফায়েল শুমাখার/এসওসএস হিউম্যানিটি
শুক্রবার দুটি পৃথক অভিযানে ভূমধ্যসাগর থেকে ১০৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে এসওএস হিউম্যানিটির উদ্ধারকারী জাহাজ৷ ছবি: রাফায়েল শুমাখার/এসওসএস হিউম্যানিটি

একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্ধারজাহাজ রোবার ৭৬ অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে ইটালির নেপলসের দিকে যাত্রা করেন৷ গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার উপকূল থেকে ওই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ছেড়ে আসা নৌকাটি মাল্টার উদ্ধার ও অনুসন্ধান অঞ্চলে এসে দুর্দশায় পড়ে।

অভিবাসনপ্রত্যাশীরা মিশর, সিরিয়া, ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়া থেকে এসেছেন বলে জানা গেছে৷ তাদের মধ্যে সাত জন নারী এবং ২৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক রয়েছেন৷ সবচেয়ে কম বয়সি যে শিশু, তার বয়স সাত মাস।

উদ্ধারকারী জাহাজ ওপেন আর্মস অপর এক অভিযানে পাঁচ শিশুসহ ৫৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করেছে৷ পাঁচ শিশুর মধ্যে দুইটি শিশুর বয়স মাত্র কয়েক সপ্তাহ।

এদিকে, মেলোনির নেতৃত্বাধীন সরকার ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা উদ্ধারকারী জাহাজগুলোর অভিযান সীমিত করে এনেছে৷ কারণ, মেলোনি সরকার মনে করে উদ্ধার জাহাজগুলোর পরিচালিত অভিযান মানব পাচারকারীদের উসকে দেয়৷ ফলে আইনি প্রক্রিয়ার উদ্ধার জাহাজগুলোর অভিযানকে সীমিত করেছে ইটালি সরকার৷ এই আইনের আওতায়, মাত্র একটি অভিযান পরিচালনার পর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত বন্দরে ফিরে যেতে হয় জাহাজগুলোকে।

কিন্তু সম্প্রতি এসে দেখা যাচ্ছে, সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরের উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় এসব দাতব্য সংস্থার সহযোগিতা নিচ্ছে ইটালির উপকূলরক্ষীরা৷ ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৩০০ অভিবাসী এসেছেন দেশটিতে৷ গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যাটি ছিল ৪৫ হাজার ৭০০।

ইটালীয় উপকূলরক্ষীদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় ১৫টি উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ ওশ্যান ভাইকিং৷ জাহাজটির পরিচালক সংস্থা এসওএস মেডিটেরানে জানিয়েছে, ১৫টি অভিযানে অন্তত ৬২৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তারা৷ তাদের সবাই টিউনিশিয়ার উপকূল থেকে ইউরোপের পথে যাত্রা করে বলেও জানিয়েছে মানবিক সংস্থাটি৷ অভিবাসীদের মধ্যে ছিলেন সুদান, গিনি, বুরকিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট, বেনিন ও বাংলাদেশের নাগরিকেরা৷ তবে কোন দেশের কতজন নাগরিক ছিলেন, তা নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে শুক্রবার দুটি পৃথক অভিযানে অংশ নিয়ে ভূমধ্যসাগর থেকে ১০৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে এসওএস হিউম্যানিটির উদ্ধারকারী জাহাজ৷

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ছেড়ে আসা নৌকাগুলো বন্ধ করতে টিউনিশিয়া প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি৷ কিন্তু তাতেও খুব একটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷ গত ১০ দিনে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবির ঘটনা বেড়েছে, অনেকেই সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে পড়েছেন দুর্দশায়৷ চলতি বছর হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী উত্তর আফ্রিকার দেশটি থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, অনেকে পৌঁছেছেন।

গেল সপ্তাহেও টিউনিশিয়ার উপকূল ছেড়ে আসা একটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৪১ জন মারা গেছেন৷ একটি বণিক জাহাজের কারণে সেই দুর্ঘটনা থেকে চার জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ মানব পাচারকারীরা ইঞ্জিন ছাড়া ওই নৌকাটিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তুলে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা।

রোববার সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে সমবেত মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এসে শোক জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।

তিনি বলেন, ‘‘একইসঙ্গে বেদনা এবং লজ্জিত হয়ে বলতে হচ্ছে, চলতি বছর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পৌঁছাতে গিয়ে অন্তত দুই হাজার শিশু, নারী ও পুরুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘এটি মানবতার জন্য একটি উন্মুক্ত ক্ষত।’’

টিএম/এআই (এপি, ডিপিএ)