চলমান সংবাদ

আশ্রয়প্রার্থীদের বাসস্থান সংকটে বেলজিয়াম: ইইউ আদালতের নিন্দা

আশ্রয়প্রার্থীদের বাসস্থান নিশ্চিত করতে ব্রাসেলসের একটি আদালতের দেয়া রায় বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে বেলজিয়াম সরকার। মঙ্গলবার স্ট্রসবুর্গভিত্তিক ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের এক রায়ে এ কথা বলা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির নিন্দা করেছে ইইউ আদালত।

আশ্রয় কাঠামো নিয়ে ব্রাসেলসের একটি আদালত ২০২২ সালে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের প্রতি একটি সিদ্ধান্ত জারি করেছিল। কিন্তু সরকার আদালতের সেই রায় বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হলে আফ্রিকার দেশ গিনি থেকে আসা এক আশ্রয়প্রার্থী দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে স্ট্রসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর) এ মামলা করেন।

ইইউ আদালত মামলা গ্রহনের পরই ওই ব্যক্তিকে দ্রুত আবাসন ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।

ভুক্তভোগী ইসিএইচআরকে জানান, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। ইসিএইচআর-এর অন্তর্বর্তীকালীন সিদ্ধান্তের পরই তাকে আবাসন ব্যবস্থায় স্থান দেওয়া হয়েছিল।

শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের জন্য নিবেদিত বেলজিয়াম সরকারের দপ্তর (সিজিআরএ) আশ্রয় আবেদনের ছয় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জারির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেশটির আশ্রয় প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হলে অপেক্ষা বাড়তে থাকে আবাসনের আশায় থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের।

দীর্ঘ আবেদন প্রক্রিয়া এবং অভ্যর্থনা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ার কারণে অনেক আবেদনকারীরা রাস্তায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন।

২০২২ সালে বেড়েছে আশ্রয় আবেদন

অবশ্য ইউরোপীয় আদালতের বিচারকেরা স্বীকার করেছেন, বেলজিয়াম সেই সময়ে একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। ৬৫ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিকের কারণে আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা আবেদনের হার ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

দেশটির আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নিকোল ডি মুর বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ইইউ মানবাধিকার আদালত বেলজিয়ামের অতিরিক্ত আবাসন তৈরি, কর্মী নিয়োগ এবং আশ্রয়ের আবেদনের প্রক্রিয়াকরণের সময় সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যে নেওয়া উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে সরকার জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তনের সংখ্যা দ্বিগুণ এবং অভিবাসন সংক্রান্ত একটি নতুন চুক্তির মাধ্যমে সংকট মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়া, বেলজিয়ামের আশ্রয় কাঠামোতে বিদ্যমান আট হাজার স্থানের পাশাপাশি অতিরিক্ত দুই হাজার স্থান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।

রায়ে “দুর্বল ব্যক্তিদের আগে আশ্রয় দিতে” বেলজিয়ান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।

তবে আদালত জানিয়েছে, সরকার আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য আবেদনকারীদের অভ্যর্থনা সম্পর্কিত চূড়ান্ত বিচারিক সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে পদ্ধতিগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

রায়ে আরও বলা হয়, “মানুষের মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে আদালতের আদেশ কার্যকর করতে নেওয়া দীর্ঘ সময় যৌক্তিক নয়। এটি দেশীয় আদালতের জারি করা আদেশ মেনে চলার স্পষ্ট অস্বীকৃতি।”

ইইউ আদালতে আরও আবেদন

গিনির আশ্রয়প্রার্থীর অনুরূপ বর্তমানে ৩৫৮টি আবেদন ইইউ আদালতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব ব্যক্তিকে আবাসন দিতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা মঞ্জুর করেছে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত। ৷

বেলজিয়ামের ফেডারেল পার্লামেন্টের গ্রিন (ইকোলো) দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইমন মাউটকুইন টুইটারে এই রায়ের প্রতিক্রিয়া বলেন, “আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ১৬০০টিরও বেশি অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের পরে ইসিএইচআর এই বিষয়ে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে প্রথম নিন্দা জারি করেছে। আমাদের দেশ মৌলিক অধিকারকে সম্মান করে না।”

তিনি বলেন, “এই সমস্যার একটি খুব সহজ স্বল্পমেয়াদি সমাধান রয়েছে। যেসব ব্যক্তিদের থাকার জায়গা নেই তাদের হোটেল বা ব্যারাকে রাখা। আমার দল সংকটের শুরু থেকেই এটি করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ডান এবং ফ্লেমিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এটি বাস্তবায়ন করেনি।”

এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডি মুর বলেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আশ্রয় ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে জুনের শুরুতে যে চুক্তিটি হয়েছিল তার পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয়প্রার্থীদের একটি ন্যায্য বণ্টন প্রয়োজন। এছাড়া যাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা কম তাদের জন্য একটি দ্রুত সীমান্ত পদ্ধতিও চালু করা উচিত।”

এমএইউ/টিএম (ইউরাসিটি টিভি)