বাসদ(মার্কসবাদী)-র উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ
নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন,দ্রব্যমূল্য কমানো, সবার জন্য রেশন চালুসহ ৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখা গত ৫ এপ্রিল,২০২৩ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে।চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জনাব আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপি পেশের পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দুপুর ১২ টায় একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদের সভাপতিত্বে ও সদস্য দীপা মজুমদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা সদস্য আসমা আক্তার,ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য্য সোমা,জাহেদুন্নবী কনক,রিপা মজুমদার প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন,“আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনমনে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমাদের দল বাসদ (মার্কসবাদী) ও আমাদের জোট ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ এর পক্ষ থেকে এবং প্রায় সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হয়েছে।কারণ বর্তমান আওয়ামীলীগ দলীয় সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে বলে জনগণ মনে করেনা। এ দাবি জানানোর পাশাপাশি আমরা মনে করি, নির্বাচনে জনগণ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে সেরকম একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করে ও বর্তমান অনুগত কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে একটি স্বাধীন ও আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা ভোটাধিকার আদায় ও জনজীবনের সংকট নিরসন করার জন্য জনগণকে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আজকের দিনে গণআন্দোলন ছাড়া ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারও রক্ষা করা যাবে না। প্রায় তিনমাস ধরে আমরা স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও পুলিশের বাধার মুখে পড়েছি। সাধারণ জনগণ আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন করেছেন। আমাদের কর্মসূচিতে শুধু স্বাক্ষরই দেননি, তারা আমাদের সাহস দিয়ে, পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমরা জনগণের সহযোগিতা নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় ও রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাব। আপনাদের সকলকে গণআন্দোলনের দল বাসদ (মার্কসবাদী) কে শক্তিশালী করার আহবান জানাই।”
বক্তারা আরো বলেন,‘‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার ফলে,সিন্ডিকেটের কারসাজিতে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীক গ্রুপের হাতে বাজার জিম্মি।সংসার খরচ বাড়লেও,মানুষের আয় বাড়েনি। বেঁচে থাকার মতো মনুষ্যোচিত মজুরি থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত। স্বাধীনতার এত বছর পরেও তাদের নিম্নতম কোন জাতীয় মজুরি নেই। কৃষক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। অথচ মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়াদের কারসাজিতে কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষক দিশেহারা। দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপীদের একের পর এক ঋণ মওকুফ করা হয়, সামান্য ঋণের দায়ে লক্ষ লক্ষ কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে হয়রানি চলছে। দেশে নারী ও শিশু হত্যা, ধর্ষণ বাড়ছেই। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই ধর্ষিত হয়েছে ৪ হাজার ৩৬০ জন নারী, এর মধ্যে ৪৫০ জনকে আবার ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৬০ জন শিশু। বিচারহীনতা, অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে না পারলে, তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’’
সমাবেশের পূর্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।