‘চিঠি’ – কাওসার পারভীন

চিঠির জন্য অপেক্ষায় থাকতে, চিঠি পেতে বা চিঠি লিখতে ভালো লাগে। চিঠির উত্তর এসে পৌঁছুতে যে সময় কাটে, তাতে মৃদু একটা মধুরতা থাকে। চিঠির অক্ষর, স্পর্শের ছোঁয়ার মাঝে মানুষের অন্তরের কথা শোনা যায়, যা কোলাহলের চেয়ে আলাদা।
স্মৃতিতে আমৃত্যু রয়ে যাবার মতো চিঠি বা নোট রয়েছে আমার। সবার থাকে।
যোগাযোগের এ মাধ্যমটি কম প্রচলিত এখন।
ভাবনা প্রকাশ করতে চিঠি সাহায্য করে। পুলকে, মমতায়, প্রয়োজনে, ভক্তিতে কতো কতোভাবে চিঠি আমাদের প্রকাশ করে। লিখতে লিখতে নিজেকে নিজের কিছুটা জানা হয়। নৈরাশ্য বা বিষন্নতায় ডুবতে থাকলে বিশেষ আয়োজন ছাড়াই চিঠি লেখা যায়।

যদি অপেক্ষার অবসান না হয়, কেউ যদি না লিখে – নিজেকে লেখা যায়। এক একটি দিনকে অথবা ভিন্ন ভিন্ন ‘অনুভব’কে উদ্দেশ্য করে চিঠি পাঠানো যায়। অন্তরের গহীনের সাথে পরিচিত হবার প্রয়োজন রয়েছে। সব দ্বিধা ডিঙিয়ে নিজের সাথে পত্র/ কথা বিনিময় বাস্তবতা সামলে চলা মানুষের কোনো ক্ষেত্রে হয়তো স্বস্তির কারণ হতেও পারে। তেমন চিঠি লিখে, অব্যক্ত অনুভবটুকু প্রকাশ যদি প্রয়োজন না-থাকে, ধীরে ধীরে সেটি পুড়িয়ে ঈথারে মিলিয়ে দেয়া যায়।
আমার আদুরে ভাগ্নে একদিন ঝলমলে একটা গিফটবক্স এনে দিলো। কিছুই অনুমান করতে পারিনি কি হতে পারে।
সুভ্যেনির! ছোট্ট একটি নীল রঙের পোস্টবক্স। চার বছরের ভাগ্নেকে বোঝাতে লাগলাম এটি কি। ভেবেছি চিঠির মতো প্রাচীন বিষয় ওর জানবার কথা না। ও গাম্ভীর্য নিয়ে বললো, “ওটা তো লাল হয় !” হাসলাম। ছোট্ট তো জানে!!
পোস্টবক্সের ওপরের অংশে দেখলাম একটি কাগজ ভাঁজ করে রাখা।
আমার কাছে চিঠি !
কন্যাসম এক স্নেহাস্পদ আমার শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাচ্ছে। যাবার আগে জানিয়ে গেছে, অন্তত ইলেক্ট্রনিক পত্রে হলেও তাকে যেন স্মরণে রাখি। আমার অনুভব-তন্ত্রীর দুর্বোধ্য ফর্মুলা নিজের কাছে বরাবর অজানা। কখন যে হঠাৎ ঝলসে ওঠে, চমকে যায়, কখন আবার অতলে তলিয়ে যায় – বোঝা দায়।
চিঠি পড়ে অনির্বচনীয় আনন্দে আমার চোখ ভেসে যাচ্ছে।
# ১৭/০৯/২০২২ #