মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে এমন ভাইরাসও পৃথিবীতে আসতে পারে -ডাঃ এ,কে,এম,আরিফ উদ্দিন আহমেদ (আরিফবাচ্চু)
করোনা ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে, যে এমন ভাইরাস আসতে পারে, যা এই মানব সভ্যতাকে মূহুর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারে।
বহুকাল ধরে নিজেদের প্রয়োজনে স্বার্থপরের মত, আমরা, প্রকৃতি-পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা প্রায় ভুলতেই বসেছি। প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থানে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে মানুষ। জাতিতে জাতিতে যুদ্ধের পাশাপাশি পরিবেশের জন্য ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম এর কারনে নেতিবাচক দিকে টেনে নিয়ে গেছে মানব জাতিকে। তাই হয়ত প্রকৃতি নিজ নিয়মে তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। করোনা অতিমারী, কলকারখানা ও পরিবেশ দূষণকারী অনেক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে। করোনা আমাদেরকে শিখিয়েছে পরিবেশ দূষণকারী কার্যক্রম বন্ধ রাখলে মানুষের কোন ক্ষতি হবেনা। এই করোনা অতিমারীতে পরিবেশ ও প্রাণীকূলের ভারসাম্যের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। বন্য প্রজাতির প্রানী ভক্ষন, ও অন্য প্রানীর নিজস্ব বাসস্থান ধ্বংস করে মানুষের বসবাসস্থলে তাদেরকে নিয়ে আসা, মানুষের জন্য আত্মঘাতী হিসেবেই এখন বিবেচিত হচ্ছে। এতে অন্য জীব দেহের জীবানু মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর জীবানুর সংমিশ্রনের সুযোগ পাচ্ছে, যে কারনে উদ্ভুত হচ্ছে মানুষের জন্য বিধ্বংসী জীবানু, যা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা মানুষ অর্জন করতে পারছেনা।
করোনা ভাইরাস এর জীনের গঠন খুব দ্রুত পরিবর্তীত হয়। এই ভাইরাসের পরবর্তী কোন এক রুপ মানুষের জন্য অধিক বিধ্বংসী হিসেবে আবির্ভুত হতে পারে, যা পুরো মানব জাতিকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। করোনা ভাইরাস আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে, মানুষের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার জন্য ভাইরাসই যথেষ্ট। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যর্থ হচ্ছে এই অতিমারী মোকাবেলায়। করোনা আমাদেরকে শিখিয়ে দিচ্ছে, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদেরকে আরো মনযোগী হতে হবে। তাই সামরিক ব্যয় এর চাইতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য অধিক ব্যয় নির্ধারন করতে হবে।
গঠনগতভাবে করোনা ভাইরাস একটা আরএনএ (R N A) ভাইরাসের পরিবার। “করোনা” শব্দটার আক্ষরিক অর্থ হলো মুকুট। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় এই পরিবারের ভাইরাসকে অনেকটা রাজার মাথার মুকুটের মতন দেখায়,সেই থেকে এই নামকরণ। অন্য সকল ভাইরাসের মতো এরাও জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধির জন্য কোন না কোন একটা জীবিত কোষের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
এই ভাইরাসের সবচেয়ে বাইরের অংশে থাকে গ্লাইকোপ্রোটিনের স্পাইক বা কাঁটা যেগুলোর সাহায্যে ভাইরাসটা জীবন্ত কোষে আটকে গিয়ে সংক্রামিত হয়। দ্বিতীয় উপাদানটা হলো রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ (R N A)। জীবন্ত কোষের ভিতরে প্রবেশ করে ভাইরাসটা আরএনএ-র প্রতিলিপি তৈরি করে বংশ বিস্তার করে। আর তৃতীয় উপাদানটা হল একটা লিপিড স্তর,এটা ভাইরাসের অন্যান্য অংশকে ধরে রাখে। করোনাভাইরাস-এর মারাত্মক প্রকোপ এবং এবং তাকে কি করে ঠেকিয়ে রাখা যায়,সেটা বুঝতে হলে এই তিনটে অংশের কথাই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
যদিও করোনাভাইরাসের অনেক প্রজাতি আছে,তার মধ্যে মাত্র সাতটা প্রজাতি মানুষের দেহে রোগ সংক্রমণ করতে পারে। এদের মধ্যে চারটে সারা বছর ধরে অত্যন্ত সাধারণ হাঁচি-কাশি সর্দির উপসর্গ সৃষ্টি করে। এরা হল, 229E (আলফা করোনাভাইরাস), N L63 (আলফা করোনাভাইরাস), O C 43 (বিটা করোনাভাইরাস), H K U 1 (বিটা করোনাভাইরাস)।
এছাড়া, মার্স কভ (M E R S-C oV) – এটা একটা বিটা করোনাভাইরাস যা থেকে ২০১২ সালে মিড্ল্ ইস্ট রেস্পিরেটারি সিন্ড্রোম বা মার্স ছড়িয়েছিল। সার্স কভ (S A R S-C oV)– এটা একটা বিটা করোনাভাইরাস যা অতি তীব্র শ্বাস রোগ বা সার্স (Severe Acute Respiratory Syndrome, SARS) ছড়িয়েছিল। প্রথম ২০০২ সালে চীন দেশে এই রোগ দেখা গিয়েছিল। মৃত্যুর হার প্রায় ১০০ রোগী পিছু ১০ জন,তবুও এই রোগকে দ্রুত বাগে আনা গেছিলো কারণ মানুষ থেকে মানুষে তার সংক্রমণের হার ছিল কম। সব মিলিয়ে মোট ৮,০০০-এর কাছাকাছি রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয় ও প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়। গবেষণায় প্রমাণ হয় যে এক ধরনের গন্ধগোকুল প্রজাতির প্রাণীর থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছিল। তৃতীয় আরেকটা টাইপ, সার্স কভ–২ (S A R S-C oV-2) -কেই নভেল করোনা ভাইরাস বলা হয়। এই সার্স কভ-২ মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস ডিসিজ সংক্রামিত করে। এই ভাইরাসকে নভেল বা নতুন বলা হচ্ছে কারণ এই সংক্রামক ভাইরাসটা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটার আরেক নাম N C O V- 2019। মানুষ থেকে মানুষে এর সংক্রমণের হার প্রচণ্ড বেশি।
নির্দিষ্ট পোষক দেহের বাইরে ভাইরাস জড় ও নিষ্ক্রিয়। তাই কেবল একটি জীবিত কোষে প্রবেশ করলেই ভাইরাস সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের ফুসফুস কয়েক মিলিয়ন অ্যাপিথিলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত, অ্যাপিথিলিয়াল কোষ মূলত আমাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ ও মিউকাসের বহিরাবরণ হিসেবে কাজ করে। করোনা ভাইরাস এই আবরণের একটি নির্দিষ্ট গ্রাহক কোষের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং অন্যান্য ভাইরাসের মতো গতানুগতিক ধারায় তার জেনেটিক উপাদান প্রবেশ করায় যার প্রভাবে কোষটির অভ্যন্তরে জেনেটিক উপাদানের অনুলিপি সৃষ্টি হয় ও তা পূর্ণবিন্যাসিত হতে থাকে। অচিরেই এ কোষটি মূল ভাইরাসের অসংখ্য অনুলিপিতে ভরে ওঠে এবং অচিরেই তা একটি ক্রান্তি পর্যায়ে এসে মূল কোষকে বিদীর্ণ করে বাইরে বের হয়ে আসে এবং আশপাশের কোষ গুলোকে একই ভাবে আক্রান্ত করে। এ প্রক্রিয়া কে রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়া বলা হয়। আক্রান্ত কোষের সংখ্যা বৃদ্ধিপায় জ্যামিতিক হারে।
দেখা যায় যে, এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিনেই এ ভাইরাস আমাদের ফুসফুসের কয়েক মিলিয়ন কোষকে আক্রান্ত করতে পারে। যার প্রভাবে আমাদের ফুসফুস কয়েক কোটি ভাইরাসে পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যদিও অনেক সময় এ মুহূর্তে এসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ বলে মনে হতে পারে; কিন্তু তা তার ইউমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। যখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষ গুলো কিংবা আমাদের রক্তে থাকা লিম্ফোসাইট শরীরের ফুসফুসে এসে পৌঁছায়, তখন করোনা ভাইরা সেসব কিছু কোষকে সংক্রমিত করতে পারে।
গোটা পৃথিবী যেমনি ভাবে ইন্টারনেট দ্বারা একে-অপরের সঙ্গে সংযুক্ত ঠিক, তেমনি আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষও সাইটোকাইনস নামক এক ক্ষুদ্র প্রোটিনের মাধ্যমে একে-অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। তাই প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়াই এর প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে আমাদের এ রোগ প্রতিরোধ কোষ গুলো অতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকে। ফলে কোষ গুলোর মাঝে অতিরিক্ত উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ কোষ গুলোকে লড়াইয়ের উন্মাদনায় ফেলে দেয়।
কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মতে,এ উন্মাদনার ফলে মানব মস্তিষ্কের তাপ নিয়ন্ত্রণকারী অংশটি অর্থাৎ হাইপোথ্যালামাস অংশটি উদ্দীপ্ত হয়,যার প্রভাবে জ্বর আসে। দুই ধরনের কোষ এ ধরনের প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,যথা নিউট্রোফিলস যারা মূলত একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আক্রান্ত কোষের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং একধরনের এনজাইম নিঃসরণ করে। এই এনজাইমের প্রভাবে আক্রান্ত কোষ গুলো ধ্বংস হয়ে যায়,যদিও কিছু সুস্থ কোষও এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরেক ধরনের প্রতিরক্ষা কোষ হচ্ছে কিলার টি-সেল,যারা মূলত অটোফেজি প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত ভাবে আক্রান্ত কোষ গুলোকে ধ্বংস হওয়ার নির্দেশ দেয়; কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে এরা এত বেশি উত্তেজিত হয়ে দাঁড়ায় যে,তারা আশপাশের সুস্থ কোষ গুলোকেও আত্মহত্যার জন্য নির্দেশ দেয়। যত বেশি প্রতিরোধক কোষ ছুটে আসে,ক্ষতির পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পায়, আর তত বেশি সুস্থ ফুসফুস টিস্যু তারা মেরে ফেলে। এ প্রক্রিয়াটি এতটাই গুরুতর হতে পারে যে, মাঝে মধ্যে ফুসফুসে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে,যা ফাইব্রোসিস নামে পরিচিত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ আবার তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফিরে পেতে আরম্ভ করে, যার প্রভাবে সংক্রমিত কোষ গুলো মারা যেতে থাকে এবং ভাইরাসের নতুন করে সংক্রমণের সম্ভাবনা নস্যাৎ হতে শুরু করে। যাদের ইমিউন সিস্টেম অত্যন্ত শক্তিশালী তাদের অনেকে এ পর্যায়ে এসে সুস্থ হয়ে গেলেও যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনা মূলক ভাবে কম। বিশেষ করে কারও যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে অথবা কারও যদি শ্বাস জনিত কোনো সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে।
তখন লাখ লাখ অ্যাপিথ্যালিয়াল কোষ মারাযায় এবং একই সঙ্গে ফুসফুসের সুরক্ষাকারী আস্তরণটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অ্যালভিওলাই অর্থাৎ বাতাসের যে থলির মাধ্যমে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে থাকি তা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। এতে রোগীরা নিউমোনিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং তাদের শ্বাসকার্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় শ্বাসকার্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং তখন কৃত্ৰিম শ্বাস-প্রশ্বাস বা ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়।
ইতিমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর হাজার হাজার ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্লান্ত,এমন সময় লাখো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও বংশ বিস্তারতার শরীরে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি করে। অনেক সময় এসব ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসের প্রাচীরকে ছিন্ন করে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। এমনটি ঘটলে মৃত্যু অনেকটাই অনিবার্য। অস্ট্রিয়ার গ্রাজে অবস্থিত এক মেডিকেল ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী কোনো কোনো সময় ফুসফুসের কোষে এ ভাইরাসটি কাঙ্ক্ষিত ভাবে বংশবিস্তার ঘটাতে নাপারলে তারা পাকস্থলীতে চলে আসে এবং পাকস্থলী কোষে একই ভাবে সংক্রমণ ঘটায়, যার প্রভাবে ডায়রিয়া কিংবা পাকস্থলীতে বড় কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই অনেক সময় কোনো ধরনের জ্বর,গলাব্যথা কিংবা সর্দি-কাশি ছাড়াই সরাসরি ডায়রিয়া কিংবা পাকস্থলীর কোনো জটিলতাও হতে পারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের লক্ষণ। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্ষেত্রে জ্বর,সর্দি-কাশি কিংবা গলা ব্যথার পাশাপাশি অন্য কোনো উপসর্গ তেমনি ভাবে পরিলক্ষিত হয়না। আর করোনা ভাইরাস যেহেতু একটি আরএনএ ভাইরাস, তাই এর মিউটেশনের হারও অনেক বেশি। এ কারণে এই ভাইরাসটি দ্রুত তার টাইপ পরিবর্তন করতে পারে। যদিও সবসময়ই যে মিউটেশন অর্থাৎ আরএনএর জিনোমের সিকুয়েন্সের পরিবর্তন আমাদের জন্য ক্ষতিকারক হবে তেমনটি নয়; আর যেহেতু এ ভাইরাসটি আমাদের সবার নিকট নতুন, তাই এ জন্য এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ওষুধ তৈরি করা যায়নি।
যেকোনো আর.এন.এ (R N A) ভাইরাসের মতো সার্স কভ-২ ও খুব সহজেই তার গঠন বদলাতে পারে। অর্থাৎ, ভাইরাস যখন বংশ বিস্তার করে তখন যেমন খুশি নিজেদের জিনের সজ্জা বদলে ফেলতে পারে। এই জিনের পরিবর্তিত সজ্জা নিয়েই ভাইরাস এক মানব দেহ থেকে অন্য মানব দেহে সংক্রামিত হয়।
এখনও পর্যন্ত,করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও প্রায় ১০০ বার মিউটেশান লক্ষ্য করা গেছে। বার বার মিউটেশানের ফলে ভাইরাস খুব সহজেই নতুন নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু এই মিউটেশানের প্রভাবে কোভিড-১৯ যুক্ত রোগীর উপসর্গে কি পরিবর্তন হচ্ছে তা এখনি বলা সম্ভব নয়। তাঁর জন্য প্রচুর নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসের জিনোম সিকয়েন্সিং করে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হবে।
যদিও এখন পর্যন্ত এই নভেল করোনা ভাইরাস এর কারনে কোভিড রোগে মৃত্যু হার ৩.৪ শতাংশ, কিন্তু যদি মিউটেশান এর কারনে এই নভেল করোনা ভাইরাস অন্য কোন ভাইরাস এর সাথে মিশে যায় যা বায়ু বাহিত ভাইরাস, তাহলে হয়তো করোনার নব এই রূপ আরো বেশী সংক্রমনশীল হয়ে যেতে পারে কিংবা মানব শরীরে আরো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যার চিকিৎসা যানা নেই।
এটাও ধারনা করা যায়, কোভিড টিকার কারনে হয়তো নভেল করোনা ভাইরাস নিজ থেকেই মিউটেশান এর মাধ্যমে আরো বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে। কিংবা সময়ের পরিক্রমায় করোনা ভাইরাস মানুষের অন্য কোন রোগের ভাইরাস (যেমন এইচ আই ভি) এর সাথে মিশে গিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। আর যদি এমন হয় তবে পারমাণবিক বোমার প্রয়োজন হবেনা, জীবানুই ধ্বংস করে ফেলতে পারে মানব সভ্যতা।
তাই এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে। সময় এসেছে জীবানু নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর এবং নিজেদের সুরক্ষায় আরো কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় (যেমন ভার্চুয়াল প্রটেক্টিভ কাভারিং অফ হিউমেন) তা উদ্ভাবনের চেষ্টা করার।
লেখকঃ-
ডাঃ এ,কে,এম,আরিফ উদ্দিন আহমেদ (আরিফবাচ্চু)
ফোকাল পার্সন অফ কোভিড ইউনিট ও একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল,চট্টগ্রাম।
প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল মেডিসিন।
মেডিকেল কলেজ অফ সিয়ামেন ইউনিভার্সিটি, চায়না।
[তথ্য সূত্র ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব সাইট]